ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অলিম্পিক সিমেন্টের নতুন ইউনিট ও ব্রান্ডের উদ্বোধন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৫
অলিম্পিক সিমেন্টের নতুন ইউনিট ও ব্রান্ডের উদ্বোধন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দেশ-বিদেশে ভোক্তার ব্যাপক ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ অলিম্পিক সিমেন্ট লিমিটেডের তৃতীয় ইউনিট এবং নতুন ব্রান্ড অ্যাংকর সিমেন্ট আপ এর উদ্বোধন করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে শুক্রবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দুপুরে বরিশালের দপদপিয়া এলাকায় অ্যাংকর সিমেন্ট কারখানা মাঠে এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।



খান সন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান একেএম আজিজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, সংসদ সদস্য তালুকদার ইউনুস এবং আশিকুর রহমান।

এসময় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, অলিম্পিক সিমেন্টের এ উদ্যোগ দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সৃষ্ট শিল্পবান্ধব পরিবেশের প্রতিফলন বলে আমি মনে করি। আমার বিশ্বাস, এ প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে ভবিষ্যতে অন্য শিল্প উদ্যোক্তারাও তৃণমূল পর্যায়ে তাদের বিনিয়োগ প্রসারিত করবেন।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ আমাদের সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য দেশে ব্যাপক হারে শিল্পায়ন প্রয়োজন। এ শিল্প উদ্যোগ অব্যশ্যই দেশের মাটি-মানুষ ও আলো-বাতাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, শিল্প উদ্যোগের মাধ্যমে যাতে দেশে ব্যাপকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলে দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর শ্রমঘন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এর মাধ্যমে জনগণের জন্য কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির সুযোগ বাড়িয়ে আমরা কাঙ্খিত অগ্রগতির লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো।

আমির হোসেন আমু বলেন, খানসন্স গ্রুপ দেশের একটি খ্যাতনামা শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। টেক্সটাইল, অটোমেবাইল, হাউজিং, সিমেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প খাতে এ কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬শ কোটি টাকা। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়।

এ গুলোতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় ৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে শিল্পায়নে এ প্রতিষ্ঠানের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ করার মত।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে ৫৪টি বেসরকারি সিমেন্ট কারখানা রয়েছে। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২ কোটি মেট্রিক টনের ওপরে। বর্তমানে এসব কারখানায় বছরে প্রায় দেড় কোটি মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদিত হচ্ছে। গুণগতমানের জন্য আমাদের উৎপাদিত সিমেন্ট বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বিশেষ করে, ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত প্রদেশগুলোর মধ্যে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে আমাদের সিমেন্ট যাচ্ছে। আমরা প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন সিমেন্ট রফতানি করছি। এ খাতে আমাদের রফতানি আয় প্রায় ১৭০ কোটি টাকা।

অলম্পিক সিমেন্ট খানসন্স গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে সিমেন্টের চাহিদা মেটাতে এ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে এ কোম্পানির দু’টি ইউনিটে দৈনিক ১৬০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয়।

মন্ত্রী আরো বলেন, ঐতিহ্যগত ভাবেই বরিশাল বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ জনপদ। এখানে ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পায়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলায় প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কারের ফলে এ অঞ্চলে শিল্পায়নের সম্ভাবনা আরো বেড়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ কাঙ্খিত জীবন মানোন্নয়ন সম্ভব। বর্তমান সরকার এলাকাভিত্তিক শিল্প সম্ভাবনা কাজে লাগানোর নীতিতে বিশ্বাসী। এ নীতির আলোকে সরকার ভোলায় একটি ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এছাড়া ২২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্পও বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এসময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে বক্তারা বলেন, জনসংখ্যার অবিশ্বাস্য বিস্ফোরণ আর অপরিকল্পিত নগরায়নে প্রতিনিয়ত কৃষি জমি বিলীন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। তাই কৃষি জমিকে ধংসের হাত থেকে রক্ষায় উন্নত বিশ্বের মত পরিকল্পিত বহুতল বিশিস্ট সু-উচ্চ ভবন তৈরির দিকে এগুতে হবে। যেখানে সল্প জমিতে নিশ্চিত হবে বহু মানুষের আবাসন। মূলত আমাদের নতুন ব্রান্ড অ্যাংকর সিমেন্ট আপ সু-উচ্চ ভবন নির্মাণে সহায়ক হবে।

অ্যাংকর সিমেন্টের পক্ষ থেকে বরিশাল অঞ্চলে একটি এলসি স্টেশনের দাবি জানানো হয়। যাতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

দক্ষিণবাংলার ঐতিহ্যবাহী একমাত্র সিমেন্ট উৎপাদনকারী অলিম্পিক সিমেন্ট লি. নামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অ্যাংকর সিমেন্ট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। সে সময় থেকে দৈনিক ১৬ হাজার ব্যাগ ঊৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উন্নত মানের কাচামাল আমদানি করে সঠিক গুণগত মান বজায় রেখে আসছে।

কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তার আস্থা অর্জন করে ২০০৩ সালে আইএসও সনদ পায়। বাজারে অ্যাংকর সিমেন্টের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ২০০৮ নালে ২য় ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ হাজার ব্যাগে উন্নিত হয়।

শুক্রবার তৃতীয় ইউনিটের উদ্বোধন করে দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৮০ হাজার ব্যাগে উন্নিত করা হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিষ্ঠানটির কতৃপক্ষ।

অনুষ্ঠানে খান সন্স গ্রুপের চেয়ারম্যানগণ, অলিম্পিক সিমেন্ট লিমিটেডের পরিচালকরাসহ কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।