ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গাউছিয়া কাপড় বাজার

শত কোটি টাকার বিক্রি কমে ১০ কোটিতে

সাইফুল ইসলাম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫
শত কোটি টাকার বিক্রি কমে ১০ কোটিতে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের ভুলতার গাউছিয়া কাপড় বাজার। এটি এশিয়‍া মহাদেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড় বাজার বলে দাবি এখানকার ব্যবসায়ীদের।



আগে স্বাভাবিক সময়ে রাজধানী সংলগ্ন এই বাজারে সাপ্তাহিক হাটবারের দুই দিনে বেচাবিক্রি দাঁড়াতো অন্তত শতকোটির টাকার ওপরে। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ ও হরতালের কারণে এই বিক্রি নেমে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি টাকায়।

টানা অবরোধ ও হরতালে এ বাজারের প্রায় ৩ হাজার ছোট-বড় পাইকারি ব্যবসায়ীদের এখন নিত্য লোকসান গুণতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অল্পদিনেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলে আশঙ্কা তাদের।

সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন গাউছিয়া কাপড় বাজার ঘুরে বিভিন্ন বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত এশিয়ার বৃহত্তম এ বাজারে দেশের আনাচে-কানাচে থেকেই বেশিরভাগই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আসেন। ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজ মিলিয়ে এ বাজারে অন্তত ৩ হাজার দোকান রয়েছে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানী থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দ‍ূরে ভুলতা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠা এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর পাইকারি কাপড় বাজার গাউছিয়া। কিন্তু গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লাগাতার অবরোধ ও কয়েক দফার হরতালে বর্তমানে ক্রেতাশুন্য হয়ে পড়েছে ‌এ বাজার।

বেচাকেনা না থাকায় বিভিন্ন প্রকার শাড়ি, লুঙ্গি, ওড়না, থ্রি-পিস, গামছা, বিছানার চাদর, তোয়ালে, মশারি ও বিভিন্ন ধরনের থান ও গজ কাপড়ের জন্য বিখ্যাত এ বাজারের এসব মালামাল দোকানেই পড়ে থাকছে।

তারা জানান, এ বাজারে সপ্তাহের প্রতি সোম ও মঙ্গলবার হাটের দিনে ছোট দোকানে প্রায় ২ থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত, মাঝারি দোকনগুলোতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং বড় দোকানগুলোতে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। এসব মিলিয়ে এ বাজারে সপ্তাহে বিক্রি ছাড়িয়ে যায় ১০০ কোটি টাকারও বেশি।

কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এলাকা থেকে ক্রেতারা আসতে না পাড়ায় বিক্রিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

এছাড়া, অধিক মূল্যে দোকান ভাড়া নিয়ে বেচাকেনা তেমন না হওয়ায় প্রতিদিনই লোকসান গুণতে হচ্ছে কাপড় ব্যবসায়ীদের।

বাজার ঘুরে জানা যায়, হাটের দিন ছাড়া অন্যান্য দিন প্রায় দেড় হাজারের মতো দোকানঘর খোলা থাকে এখানে। কিন্তু অবরোধ ও হরতালের কারণে এখন হাটের দুই দিন সোম ও মঙ্গলবার দোকান প্রতি গড়ে বিক্রির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ৩০ ‍হাজার টাকায়। বড় পাইকারি দোকানে আগে যেখানে বিক্রি কখনো কখনো ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতো, এখন তা নেমে এসেছে ১ লাখে। আর হাটবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে বেচাকেনা নেই বললেই চলে।

এমন অবস্থা চললে বাজারের ব্যবসায়ীরা অচল হয়ে পড়বেন বলে দাবি তাদের।

ব্যবসায়ীরা আরো জানান, এ কাপড়ের বাজারে পুরুষ ক্রেতাদের চেয়ে নারী ক্রেতাই বেশি। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত নারী-পুরুষ ব্যবসায়ীরা এ বাজার থেকে কাপড় ক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ক্রেতারা আসতে না পাড়ায় বিদেশেও কাপড় রপ্তানি করতে পারছেন না তারা। অবরোধ ও হরতালের কারণে ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ীরা আছেন বেশি কষ্টে। এখন পুঁজি ভেঙে চলতে হচ্ছে তাদের।

বাজারের ফুজি প্রিন্ট এর মালিক সোহাগ হাওলাদার জানান, তার দোকানে সোম-মঙ্গলবার গড়ে বেচা-কেনা হতো ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এখন তা কমে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় এসেছে।

কথা হয় ঝিলমিল প্রিন্টের পরিচালক সঞ্জয় সাহার সঙ্গে। তিনি জানান, এখন তার প্রতিদিনি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেচাকেনা হচ্ছে, এতে কর্মচারীদের বেতনও হয় না।

রাজীব ক্লথ স্টোরের মালিক দিপক কুমার জানান, রাজধানীসহ আশপাশ এলাকা থেকে কিছু সংখ্যক ক্রেতা আসে। কিন্তু রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলো থেকে ক্রেতারা আসতে পারছে না। তাই বেচাকেনা নেই।

বাজারের লুঙ্গি ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানান, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে বাড়ি চলে যেতে হবে।

মশারি ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, বেচাকেনা কম হওয়ায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে উৎপাদন কম হলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকই দিতে হচ্ছে।

একই অভিযোগ থ্রি-পিস ব্যবসায়ী আরিফ হোসেনের। তিনি বলেন, বেচাকেনা কম থাকায় উৎপাদন কমে গেছে। তাকে তাই শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে।
 
কথা হয় এ বাজারে নিয়মিত ক্রেতা এমন কয়েকজন নারী কাপড় ব্যবসায়ী শরিফা আক্তার, আয়েশা খাতুন, আমেনা বেগম, রহিমা বেগম, আছিয়া আক্তার, পারভিন আক্তার, সালেহা বেগম, রাশিদা বেগমসহ আরো বেশ কয়েক জনের সঙ্গে। তারা জানান, জীবিকার তাগিদে দ‍ূর-দূরান্ত থেকে গাউছিয়া কাপড়ের বাজারে আসতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু এলাকায় তেমন বেচাকেনা না থাকায় অল্প কিছু মালামাল ক্রয় করেই ফিরছেন তারা। আবার এ অবস্থায় অনেকেই আসতে না পেরে পুঁজি ভেঙে সংসার চালাতে হচ্ছে কারো কারো।

গাউছিয়া কাপড় বাজারের ম্যানেজার আব্দুল আউয়াল জানান, বর্তমানে যে হাল চলছে এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দোকানঘর মালিকরা। কারণ বেচাকেনা করতে না পারলে ব্যবসায়ীরা দোকানঘরের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন না। কাপড় তৈরির মিল-কারখানার শ্রমিকদেরও বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবে না মালিকরা।

গাউছিয়া দোকান-মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, রাজনৈতিক ঝামেলা রাজনৈতিকভাবেই শেষ করা উচিত। এভাবে অবরোধ ও হরতাল চলতে থাকলে গাউছিয়া কাপড় বাজার অচল হয়ে পড়বে। তিনি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহারের দাবি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।