ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাজশাহীতে টমেটো চাষিদের ক্ষতি ৮০ কোটি টাকা

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫
রাজশাহীতে টমেটো চাষিদের ক্ষতি ৮০ কোটি টাকা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: রাজশাহীতে সহিংস রাজনীতির আগুনে পুড়ছে কৃষকের কপাল। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলিয়েও চলমান অবরোধ-হরতালের কারণে তা বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা।

ফলে জমির ফসল জমিতেই পচছে। এতে মাথায় হাত পড়েছে এ অঞ্চলের মেহনতি চাষিদের।

বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে টনের পর টন টমেটো পড়ে আছে কৃষকের ক্ষেত ও উঠানে। যা পচে নষ্ট হচ্ছে। মানুষের বদলে তা খাচ্ছে পশু-পাখি। ফলে দেশের টমেটোর অন্যতম মোকাম রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকার চাষিদের এবার প্রায় ৮০ কোটি টাকার লোকসান গুণতে হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষক উন্নয়ন ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোকলেসুর রহমান।

তিনি বলেন, অনেক কৃষক জমি থেকে টমেটো তুললেও অবরোধ-হরতালের কারণে তা বাইরে পাঠাতে পারছেন না। আবার বাজারে দাম না থাকায় বর্তমানে অনেক কৃষক জমিতে থাকা অবশিষ্ট টমেটো না তুলে তার ওপর দিয়েই হালচাষ করে ফেলছেন।  

রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকা টমেটো চাষের জন্য বিখ্যাত। ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় রয়েছে এখানকার টমেটোর কদর। কিন্তু নাশকতার আশঙ্কায় ট্রাকে টমেটো নিয়ে রাস্তায় নামা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ট্রাকের দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও টমেটো ভর্তি গাড়ি ঢাকায় নেওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের পাহারায় কিছু ট্রাক গেলেও তার সংখ্যা কম।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একমাস আগেও প্রতি মণ পাকা টমেটো ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু অবরোধের মধ্যে এখন আর টমেটো কিনছেন না স্থানীয় পাইকাররা। আসতে পারছেন না বাইরের ব্যবসায়ীরাও। খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা গোদাগাড়ী থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে টমেটো কিনছেন। এ অবস্থায় চরম আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন টমেটো চাষিরা। পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন অনেকে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী মহিষালবাড়ি গ্রামের টমেটো চাষি ইয়াসিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে উপজেলার বাজারে পানির দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। তাও কেউ কিনছে না। বাড়ির উঠোনে ও ক্ষেতে কমপক্ষে ৩০ মণ পাকা টমেটো পড়ে আছে। যা পচে যাচ্ছে।

টমেটো ব্যবসায়ী ফরিদ শেখ জানান, অবরোধের মধ্যে কেউই টমেটো কিনতে চাচ্ছেন না। দ্বিগুণ ভাড়া ও অন্যান্য খরচের কারণে পাইকাররা টমেটো নিয়ে লোকসানের ভয় করছেন। এ কারণে তিনিও কারবার বন্ধ করেছেন। এক মাসে প্রায় চার লাখ টাকা গচ্চা গেছে বলে জানান তিনি।

গোদাগাড়ীর মাটিকাটা গ্রামের টমেটো চাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, দেশে অবরোধ-হরতালের মতো সহিংস কর্মসূচি না দিলে টমেটোর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকতো। বিভিন্ন জেলার বাজারে নিয়ে যেতে পারলে আশানুরূপ দামও পাওয়া যেতো। এভাবে টমেটোর দাম পড়ে যেত না, কৃষকেরও লোকসান হতো না। এজন্য অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহারের দাবি জানান তৃণমূলের এ কৃষক।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) হজরত আলী জানান, চলতি মৌসুমে গোদাগাড়ী উপজেলায় দুই হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। প্রতি মৌসুমে এখানে টমেটো কেন্দ্রীক প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার কারবার হয়। তবে চলতি মৌসুমে ভালো ফলন হলেও অবরোধ-হরতালে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বলে জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর কবীর জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিদিনই প্রশাসনের বিশেষ পাহারায় কাঁচামালবাহী ট্রাক নিরাপদে রাজশাহী পার করে দেওয়া হচ্ছে। সামনে পেছনে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি পাহারায় পণ্যবাহী ট্রাক রাজশাহী ছাড়ছে। এর পরও যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা বিচ্ছিন্নভাবেই ঘটছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

তিনি বলেন, পণ্যবাহী ট্রাক রাজশাহী বাইপাস সড়ক হয়ে মহাসড়কে পারাপারের জন্য ৬টি ইউনিট কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সহায়তা নিয়ে কৃষকরা ইচ্ছে করলেই তাদের পণ্য ট্রাকে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পারবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।