ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মংলা বন্দরে সাড়ে ৬ হাজার গাড়ি ও কন্টেইনার আটকা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫
মংলা বন্দরে সাড়ে ৬ হাজার গাড়ি ও কন্টেইনার আটকা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাগেরহাট: টানা অবরোধ আর দফায় দফায় হরতালে মংলা বন্দের আটকে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার আমদানিকরা রিকন্ডিশন গাড়ি ও ২ হাজারের বেশি মালবোঝাই কন্টেইনার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবরোধকারীদের পেট্রোল বোমা আর আগুনের ভয়ে সড়ক পথে পণ্য পরিবহনে এখন ঝুঁকি খুবই বেশি।

অনেকেই তাই বন্দর জেটি থেকে পণ্য বাইরে নিতে পারছে না। বিদেশি কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়েছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান, বেকার হয়ে পড়েছে অনেক শ্রমিক।

এ পরিস্থিতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে গাড়ি আমদানীকারকরা। পরিস্থিত স্বাভাবিক না হলে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে ধারণা তাদের।

মংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানিকারক সিনহুয়া অটোমোবাইলসের সত্ত্বাধীকারি রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, টানা অবরোধ-হরতালে সড়ক পথে পরিবহনে আগুন ও হামলার আশঙ্কায় বন্দর থেকে গাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। মংলা বন্দরে তাদের কোটি কোটি টাকার গাড়ি আটকে পড়েছে। আমদানি করা গাড়ি বন্দর থেকে ছাড় করিয়ে শোরুমে প্রদর্শন করতে পারছেন না তারা।

স্বাভাবিক সময়ে তার প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে একশ গাড়ি ডেলিভারি করে। সে হিসেবে গত এক মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে কমপক্ষে আড়াই হাজার গাড়ি বন্দর থেকে ছাড়িয়ে শোরুমে প্রদর্শন করা সম্ভব হত। গাড়িগুলো বন্দরে পড়ে থাকায় বাড়তি গোডাউন ও ইয়ার্ড ভাড়া গুণতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গাড়ি আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকরা রিকন্ডিশন গাড়ির মডেল অনুয়ায়ী প্রতিটি গাড়ির দাম ২০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। গত এক মাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মংলা বন্দর জেটি ও ইয়ার্ডে সাড়ে চার হাজার রিকন্ডিশন গাড়ি ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। মংলা বন্দরে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানির সঙ্গে প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে।

গাড়ি ছাড় করাতে না পারায় ব্যাংক ঋণ, ইয়ার্ড চার্জসহ আনুষাঙ্গীক বিভিন্ন খাতে ক্ষতি প্রতিদিন বেড়ে চলেছে খরচ। এ অবস্থায় বড় ধরনের লোকসান ও পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন এ খাতের ব্যবাসায়ীরা।

মংলা বন্দরের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে জানান, চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিত ও হরতাল-অবরোধে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাড়ি ছাড় শতকারা প্রায় ৩৫ ভাগ কমে গেছে। এর মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি এমভি গোল্ডেন ফান নামে একটি জাহাজ ৩০৮টি রিকন্ডিশন গাড়ি নিয়ে বন্দর এসেছে। এ ছাড়া আগামী দু’তিন দিনে আরো পাঁচশ গাড়ি নিয়ে বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে আরো একটি জাহাজ।

বন্দর সূত্র জানায়, মংলা বন্দরের ইয়ার্ড ও জেটি এলাকায় প্রায় ১০ হাজার গাড়ি রাখা যায়। তবে আমদানি করা গাড়ি বন্দর ইয়ার্ড ও গোডাউনে রাখা এবং স্বাভাবিক নিয়মে ডেলিভারি দিতে বন্দরের কোনো সমস্যা নেই। এ কারণে সুযোগ-সুবিধা বুঝে রাতেই গাড়ি ছাড় করিয়ে নিচ্ছেন আমদানিকারকদের কেউ কেউ।

লকপুর গ্রুপ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও সাউথ বাংলা এগরিকালচার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম এম আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, টানা অবরোধ-হরতালে আমাদানিকরা কাঁচামাল কারখানায় আনতে না পারায় ১৩টি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এছাড়া বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান এখন তিন সিফটের স্থলে এক সিফট চালাতে হচ্ছে। এতে ব্যাপক ভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরও জানান, মংলা বন্দরের জেটিতে তার প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা অনেক কাঁচামাল আটকে রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ট্রাক মালিকই হরতাল অবরোধকারীদের ভয়ে ট্রাক রাস্তায় নামাতে সাহস পাচ্ছে না।

বন্দরের জেটির শ্রমিক সিদ্দিকুর রহমান জানান, বন্দরের বাইরে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য ট্রাকে ওঠানো-নামানো কাজ বন্ধ থাকার কারণে অন্তত তিন শতাধিক শ্রকিম বেকার হয়ে পড়েছেন।

এব্যাপারে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) কাজী গোলাম মোক্তাদর বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধে মংলা বন্দর দিয়ে আমদানিকরা রিকন্ডিশন গাড়ি ছাড় হচ্ছে না বিষয়টি তেমন হয়। ব্যবসায়ীরা গাড়ি ছাড় না করালে বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই।

আগের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও এখন বেশ কিছু আমদানিকারক রাতের বেলায় ছাড়করা গাড়ি বন্দর থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে বন্দরের অভান্তরে সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

এক প্রশ্নে জবাবে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বর্তমানে বন্দরে চার হাজারের বেশি আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ি ও দুই হাজারের বেশি কন্টেইনার রয়েছে।

গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক বে অটোমোবাইলসের সত্ত্বাধিকারী ও বারভিটা’র (বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যাল ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন) সাবেক সভাপতি আবদুল হক বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে মংলা বন্দরে আমার প্রতিষ্ঠানের এক হাজার গাড়ি পড়ে রয়েছে। কবে নাগাদ এসব গাড়ি ছাড় করে নিতে পারব তা নিয়ে রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা রয়েছি।

অন্যদিকে কাস্টমস শুল্ক আইন অনুযায়ী, আমদানিকরা রিকন্ডিশন গাড়ি ৪৫ দিনের মধ্যে ছাড়িয়ে নিতে না পারলে তা নিলামে উঠবে। কিন্তু মংলা বন্দরে ব্যবসায়ীদের আনা গাড়ির সিংহভাগই এখনো পড়ে আছে জেটির ইয়ার্ডে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় নাগাদ ছাড়িয়ে না নিলে শুল্ক বিভাগের বিধি অনুয়ায়ী বন্দরে থাকা সাড়ে চার হাজার গাড়ি নিলামে উঠতে পারে। তাই আমদানিকারকরা এখন নিলাম ও ঋণ খেলাপি হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন।

তিনি জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারনে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরে আমাদনিকরা সাড়ে ৬ হাজার গাড়ি আটকে রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার মংলায়। প্রতিদিন এই সব গাড়ি জন্য জেটি ভাড়া, ব্যাংক ঋণ, কাস্টমস টিউটি আনুষাঙ্গীক মিলে প্রায় একশ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।