ঢাকা: মো. আলাউদ্দিন আকন্দ, বাড়ি উত্তরাঞ্চলের সিরাজগঞ্জে। দারিদ্র্যতার কারণে করা হয়নি পড়াশোনাও।
ইলেকট্রিক ইন্সটলেশন থেকে শুরু করে সিভিল কনস্ট্রাকশনের অনেক কাজই তার জানা। বেতনও কয়েক কোম্পানি ঘুরে ভালই হয়েছে। কিন্তু নেই বলার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা, তেমনি নেই ১০ বছর ধরে যে কাজ শিখেছে তার গ্রহণযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিও।
আর এরকম হাজারও আলাউদ্দিনের মতো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই কিন্তু দক্ষ এমন ব্যক্তিদের পূর্ব অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট দিচ্ছে সরকার। আর এ সনদ দেশে ও দেশের বাইরে ভাল চাকরি পেতে কাজে লাগবে।
সরকার মনে করছে স্বীকৃতিহীন এসব দক্ষ মানুষ অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট পেলে তা অন্তত: জীবনের বাদবাকী সময়ে কাজে লাগাতে পারবে। কর্মক্ষেত্রে পাবে বাড়তি সুবিধা। বাড়বে ওই শ্রমিকের ভেতরের আত্মবিশ্বাসও।
বর্তমান সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিভিল কন্সস্ট্রাকশন(ইলেক্ট্রিক্যাল ইন্সস্টলেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স), সুইং মেশিন অপারেশন, টেইলারিং অ্যান্ড ড্রেস মেকিং, প্লাম্বিং, মোটর সাইকেল সার্ভিসিং, ব্লক বাটিক অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং ক্যাটাগরিতে এ সার্টিফিকেট পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধিদপ্তরের স্কিলস অ্যান্ড এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট(স্টেপ) এর মাধ্যমে এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্টেপ প্রকল্প থেকে এরইমধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ১০টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্টিফিকেট দেওয়ার কাজটি করা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে, স্টেপ এর তত্ত্বাবধানে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিবঞ্চিত দক্ষ শ্রমিকদের কর্ম জীবনের উন্নতি ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি সার্টিফিকেট (Recognition of Prior learning-RPL)দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয় সম্পর্কে স্টেপ এর উপ প্রকল্প পরিচালক জয়দেব চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে বলেন, যারা বিভিন্ন কারণে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিতে পারেন নি, কিন্তু এমনিতে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার ফলে দক্ষ হয়ে উঠেছেন তাদের জন্যই সরকারের নতুন এ উদ্যোগ। এটি একটি বড় কাজ হচ্ছে। অলরেডি এ কাজ শুরু হয়েছে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না পাওয়া লাখ লাখ কর্মী এ সার্টিফিকেট নিয়ে লাভবান হতে পারবেন। পাশাপাশি হবেন আত্ববিশ্বাসীও। সবচেয়ে বড় কথা এ সার্টিফিকেট বিশ্বের যেকোনো দেশে গ্রহণযোগ্য হবে।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় ধাপে ধাপে একজন দক্ষ শ্রমিক মূল্যায়ন পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পর্যন্ত পেতে পারেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অভিজ্ঞতার সনদ পেতে....
পূর্ব অভিজ্ঞতার সনদ অর্জনে আগ্রহী ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরিতে কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকলে নির্বাচিত যেকোনো কেন্দ্রে অধ্যক্ষ বরাবর সাদা কাগজে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র, ও ২কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
মনোনীতদের প্রতি মাসে ৩দিন করে ২বার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১দিন থাকবে তাদের দক্ষতার পরীক্ষা। আর সবগুলো দক্ষতার পরীক্ষায় যারা পাস করবে তাদেরই মিলবে স্বীকৃতি সনদ। আর এ ৩দিন সংশ্লিষ্টদের থাকা-খাওয়াসহ যাতায়াত ভাতাও দেওয়া হবে প্রকল্প অর্থায়ন থেকে।
নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- বাংলা-জার্মান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, মিরপুর-২, ঢাকা। ফোন-০১৭১৫-১৫৮১৫৩, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, দারুসসালাম, মিরপুর, ঢাকা। ফোন- ০১৭১৬-৭৪০৭৪৪, ইউসেপ-ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল, মিরপুর ২, ঢাকা। ফোন- ০১৮১৯-১৪৫১৫৮, স্টার বাংলা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, মাওনা, গাজীপুর, ফোন- ০১৭২৬৮৫১৯১৫, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, মুরাদপুর, চট্টগ্রাম, ফোন-০১৮১৯-৩৭৯০৬১, ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম ইন্সটিটিউট, সাগরিকা রোড, বেসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, চট্টগ্রাম। ফোন- ০১৮১৬-৬০৯৪৭২, বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার(বিকেটিটিসি), নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম। ফোন- ০১৭১১-২৭৩৭০৮, খুলনা শিপইয়ার্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, খুলনা। ফোন- ০১৭১৮৬২৭০৪৮, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট(ভিটিটিআই), শেরপুর রোড, বগুড়া। ফোন- ০১৯১৬১২৫৫৪৬, ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি(আইইটি), হারাগাছা রোড, শালবন, রংপুর। ফোন- ০১৭১৫৬০১২০০।
উপরোক্ত কেন্দ্রগুলো এসব দক্ষ শ্রমিকদের সময়োচিত ট্রেনিং দেবে, আর পূর্বের জানা বিষয়গুলোকে আরও ঝালিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আর সাবির্ক তদারকি আর মূল্যায়নে থাকবে বোর্ডের ট্রেনিংপ্রাপ্ত একদল প্রশিক্ষক। যার ভিত্তিতে মিলবে কাঙ্খিত সরকারি সনদ।
বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫