ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অবরোধ-হরতালের প্রভাব

সিলেটে তরমুজ নিয়ে বিপাকে চাষীরা

নাসির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৫
সিলেটে তরমুজ নিয়ে বিপাকে চাষীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট: ফলন ভালো হয়েছে, ফসলে নেই রোগবালাই। তাই খুশির অন্ত ছিল না সিলেটের তরমুজ চাষীদের।

কিন্তু তাদের সেই খুশি ম্লান করে দিলো অবরোধ-হরতাল।

বিক্রির উপযোগী হলেও তরমুজ পড়ে আছে ক্ষেতে। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা। অনেকে শিলাবৃষ্টির শঙ্কায় ক্ষেত থেকে তরমুজ উত্তোলন করে বিক্রির জন্য রাস্তার পাশে সাজিয়ে রেখেছেন পাইকারদের অপেক্ষায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সারি নদীর তীরে মাইলের পর মাইল জুড়ে রয়েছে তরমুজ ক্ষেত। যেদিকে দুচোখ যায় ক্ষেতজুড়ে শুধু তরমুজ আর তরমুজ।

উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ, জৈন্তা ও ২ নং জৈন্তাপুর নিজপাট ইউনিয়নের লামনী, ভিতরখেল, ফেরিঘাট, বড় গাঙেরপাড়সহ বেশি কিছু এলাকায় ধানীজমি ও নদীর তীরে তরমুজের চাষ করেছেন চাষীরা।

এছাড়া পার্শ্ববর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার রউয়া গ্রাম, কুরোন্দি বিল, ডিবির হাওর, কুচারাই, লাউবিল হাওরাঞ্চলে হয়েছে প্রচুর তরমুজের চাষ।

কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার দুই ধরনের তরমুজ ক্ষেত করেছেন তারা। এরমধ্যে বাংলালিংক জাতের তরমুজ উৎকৃষ্ট মানের। রোগ বালাই না থাকায় এবার ফলন ভালো হলেও বিক্রি করতে না পারায় ক্ষতির সম্মুখীন তারা।

অনেকে তরমুজ ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রির জন্য সিলেট-তামাবিল সড়কের পাশে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। কিন্তু পাইকরাদের দেখা নেই। আর দু-চার জন আসলেও গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লামনী গ্রামের লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতিবছর তরমুজ ক্ষেত করে লাভবান হই। এবারো খুশি হয়ে ক্ষেত করেছিলাম। ফসলও খুবই ভাল হয়েছে। ফসলে রোগও কম। কিন্তু অবরোধ-হরতালের কারণে আমরা এবার গোল খাইলাম।
 
এবার দেড় বিঘা জমি চাষ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য বছর ১০০ তরমুজ ৮/৯ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। হরতাল অবরোধের কারণে এবার তরমুজ বিক্রি করতে পারছি না।

জৈন্তপুর ফেরিঘাট এলাকায় ৭ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন আজিজুল ইসলাম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অন্যান্য বছর ফলন ভালো হয় না। এরপরও ২/৩ লাখ টাকা তরমুজ বিক্রি করে আয় করতাম। অথচ এবার ফলন ভালো হলেও হরতাল অবরোধের কারণে পাইকাররা আসছেন না। দুচার জন আসলেও একেবারে সস্তায় চার সাড়ে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

একইভাবে উপজেলার ভিতরিখেল আব্দুর রহমান, লামনী গ্রামের হাসন মিয়া, হান্নান মিয়া, হোছন, লক্ষী প্রসাদ গ্রামের কামাল হোসেন ও আব্দুর রহিম জানান তারা প্রত্যেকে ২/৩ বিঘা করেছেন।

তারাসহ অসংখ্য চাষী এখন দেউলিয়া। কেউ এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ তুলে, কেউবা দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা এনে ক্ষেত করিয়েছে। ফসল বিক্রি করে টাকা শোধের কথা। কিন্তু সময়মতো দেনা শোধ করতে না পারলে সুদের ঘানি টানতে হবে।  

জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজি মো. মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ বছর ১২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১০০ হেক্টর জমিতে।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে এ বছর তরমুজের চাষ ভালো হয়েছে। তবে হরতাল অবরোধের কারণে বাইরে থেকে পাইকাররা আসছেন না। ফলে স্থানীয়ভাবে চাষীরা তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৩ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।