ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আয়কর দিতে হবেনা প্রবীণ নাগরিকদের!

এস এম আববাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
আয়কর দিতে হবেনা প্রবীণ নাগরিকদের!

ঢাকা: আয়কর মুক্ত হতে যাচ্ছেন দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ ‘সিনিয়র সিটিজেন’। আগামী বাজেটেই দেশের এসব প্রবীণ নাগরিকদের করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করবে অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।


 
দেশ সমাজ ও রাষ্টের জন্য পরিশ্রম দিয়ে যারা আজ শেষ বয়সে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা সহায়তার জন্যই এই উদ্যোগ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা তৈরি করে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভা তার অনুমোদনও দেয়। জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে কার্যক্রমও হাতে নেয় সরকার।
 
গত বছরের ২১ নভেম্বর সরকারিভাবে দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে ‘সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে ১ কোটি ৩০ লাখ জনগোষ্ঠীকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করেন।

যাদের বয়স ষাট বা তার উপরে তারাই সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাদের দেওয়া হবে পরিচয়পত্র।
 
প্রবীণদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে তৈরি নীতিমালায় প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা, যাতায়াত, আর্থিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয়পত্র দেওয়ার পর নীতিমালা অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন সিনিয়র সিটিজেনরা।
 
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সুলতানুল ইসলাম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দেশের প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় এবং প্রবীণরা যেনো স্বচ্ছল জীবন যাপন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিতেই আয়কর মুক্ত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রবীণদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আগে আয়কর দিতে হতো। এখন আর তা দিতে হবে না। আগামী বাজেটে প্রবীণদের আয়করের আওতামুক্ত রাখতে বাজেটে প্রস্তাব করা হবে।
 
নীতিমালা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা
রাষ্ট্রীয়ভাবে জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি ও পরিচিতি কার্ডসহ ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমাজের বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা পাবেন। সামর্থ্য না থাকলে বিনামূল্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবাও পাবেন। সামর্থ্যবানরাও বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন।
 
তহবিল গঠন
সরকারি, বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিশেষ কল্যাণ তহবিল গঠন করা হবে। প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্রের মতো প্রবীণকল্যাণ সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন করা হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুদান তহবিল গঠন করে তা প্রবীণদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।

বিশেষ কল্যাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের দরিদ্রতম, সুবিধাবঞ্চিত, প্রতিবন্ধী, শারীরিকভাবে রুগ্ন-দুর্বল এবং পারিবারিকভাবে সামর্থ্যহীন প্রবীণদের জন্য ফান্ড গঠন করে কল্যাণমূলক কর্মসূচি নেওয়া হবে।
 
আর্থিক নিরাপত্তা
পল্লী ও শহর এলাকায় প্রবীণবান্ধব স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্প চালু করে স্বাস্থ্য ও বয়সের উপযুক্ততা বিবেচনা করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অস্বচ্ছল প্রবীণ ব্যক্তিদের পোষ্য/নির্ভরশীলদের নিয়মানুযায়ী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা
জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী সমাজ ও পরিবারে প্রবীণ ব্যক্তিরা যাতে অবহেলা, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার না হন, সে লক্ষে আইনগতভাবেই সম্পত্তিভোগের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। প্রবীণদের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও ঝুঁকিপূর্ণ হলে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
 
স্বাস্থ্য, পরিচর্যা ও পুষ্টি
প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রমে প্রবীণদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা এবং প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে বিভাগ রাখা হবে। এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।

সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হবে। এজন্য সরকারি অনুদানও দেবে বেসরকারি হাসপাতালকে।

স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হেলথ অ্যাকসেস ভাউচার, হেলথ সার্ভিস কার্ড চালু করা হবে।
বেসরকারি সংস্থা

প্রবীণ ব্যক্তিদের কল্যাণে বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে সরকার। প্রবীণকল্যাণে সর্বাত্মক সহায়তায় প্রবীণ ব্যক্তি বিষয়ক ট্রাস্ট, দানশীল ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্প্রসারণে সহযোগিতা দিতে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোকেও অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

সরকারিভাবে এসব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও এবার নতুন করে আয়কর মুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অভিরিক্ত সচিব বলেন, প্রবীণদের আর্থিক নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিবেচনায় আয়করমুক্ত রাখা হচ্ছে প্রবীণদের।
 
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, প্রবীণদের আয়কর মুক্ত রাখলে তারা শেষ বয়সেও অর্থ উপার্জনে সহায়তা পাবেন। উপার্জনে আগ্রহী হবেন। প্রবীণদের আর্থিক কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্র ও সমাজ উপকৃত হবে। তাই রাষ্ট্র প্রবীণদের সহায়তার জন্য আয়করমুক্ত করে তাদের চলার পথ সহজ করবে। এটিই স্বাভাবিক।
 
বাজেটে করমুক্ত ঘোষণা হলে ব্যবসা ও অন্যান্য আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রবীণদের একদিকে যেমন অর্থ সাশ্রয় হবে অন্যদিকে আয়কর দেওয়ার বাড়তি পরিশ্রম থেকে মুক্তি পাবেন বলে জানান সরকারের এই দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
  
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।