ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হরতাল-অবরোধের প্রভাব

চাঁচড়া মৎস্য পল্লীতে প্রতিদিন ক্ষতি ৩০ লাখ টাকা

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৫
চাঁচড়া মৎস্য পল্লীতে প্রতিদিন ক্ষতি ৩০ লাখ টাকা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোর: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা দফায় দফায় হরতাল ও টানা অবরোধের কারণে যশোরের চাঁচড়া মৎস্য পল্লীতে বেচাকেনায় ধস নেমেছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা না আসায় প্রতিদিন ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এভাবে চলতে থাকলে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দেড় লাখ পরিবার পথে বসবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশে চাহিদার মোট আমিষের শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ যশোর থেকে পূরণ হয়। যশোর চাঁচড়া মৎস্য পল্লীর ৪২টি হ্যাচারি ও পাঁচ হাজার মৎস্য চাষি সাদা মাছের রেনু (এক দিন বয়সী) ও পোনা (ছোট মাছ) উৎপাদন করে সারাদেশে সরবরাহ করে। এতে প্রতিবছর ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার লেনদেন হয় এই মৎস্য পল্লীতে।

যশোর বাবলাতলা মৎস্য চাষি সমিতির উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চাঁচড়া মৎস্য পল্লীতে উৎপাদিত পোনা মাছ বিক্রির জন্য প্রতিদিন সকালে যশোরের শংকরপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাবলাতলায় হাট বসে। এই হাটে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকার ঘের মালিকরা পোনা মাছ কিনতে আসে। তবে হরতাল-অবরোধে বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় বেচাকেনা অনেক কমে গেছে।

তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের আগে বাবলতালা হাটে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার পোনা মাছ কেনাবেচা হতো। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে কমেছে মাছের দামও। এতে চাষিদের পাশাপাশি পথে বসার উপক্রম হয়েছে এ হাটের ৭০ থেকে ৮০ জন ব্যবসায়ীর।

বুধবার (৪ মার্চ) ও বৃহস্পতিবার বাবলাতলা হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট প্রায় ক্রেতাশূন্য।

চাঁচড়া রাজবাড়ী এলাকার মৎস্য চাষি শরীফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যে গাড়ি চলাচল করলেও নাশকতার ভয়ে অন্যান্য জেলা থেকে তেমন কোনো ক্রেতা আসছে না। ফলে পোনা মাছের দাম একেবারেই কমে গেছে।

তিনি বলেন, ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের চিতল মাছের পোনা স্বাভাবিক সময়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হতো। কিন্তু বুধবার ও বৃহস্পতিবার প্রতি পিস চিতল বিক্রি হয়েছে মাত্র ১০০ টাকায়। এতে চাষিরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
এছাড়াও ১০০ টাকার প্রতি কেজি (৪০-৫০ পিস) সিলভার কার্পের পোনা ৭০ টাকা, ১৩০ টাকার প্রতি কেজি (১০ পিস) জাপানি পুটি ১০০ টাকা, ২০০ টাকা দরের গ্রাসকার্প প্রতি কেজি (১০-১৫ পিস) ১৫০ টাকা, ১৩০ টাকার প্রতি কেজি (১৫ পিস) কাতলা পোনা ৯০ টাকায়, তিন হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের রেনু পোনার কেজি ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাগুর-তেলাপিয়াসহ সব ধরনের পোনার ক্রেতা না থাকায় দাম কমেছে।

মণিরামপুরের কপালিয়া থেকে আসা পোনা মাছ ব্যবসায়ী বিপুল মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই হাট থেকে পোনা কিনে মংলা-বাগেরহাট এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু হরতাল-অবরোধে পিকআপ ভ্যানের ভাড়া বাড়ায় ও নাশকতার আশঙ্কায় স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারছি না। ফলে দিন দিন নিঃস্ব হতে চলেছি আমরা।

যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান বাংলানিউজকে বলেন, চাঁচড়া মৎস্য পল্লীতে উৎপাদিত রেনু ও পোনা মাছ ঢাকা, বরিশাল, টাঙ্গাইল, নীলফামারী, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে হ্যাচারিতে ৯০ ভাগ উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ না পেয়ে নিজেদের টাকায় যে দেশে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়, এমন মুহূর্তে রাজনীতির নামে যারা জ্বালাও-পোড়াও করছে তারা দেশের শত্রু। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা সহসা পূরণ করা সম্ভব হবে না।

তাই যেভাবেই হোক এ অবস্থার অবসান চান তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।