ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর

কাজ শুরু করেনি ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫
কাজ শুরু করেনি ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পরিবেশবাদীদের দাবি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে হাজারীবাগ থেকে অপেক্ষাকৃত কম ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট ট্যানারি ব্যবসায়ীরা একাধিক মামলাও করেন।



সরকারের পক্ষ থেকে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের জন্য দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ১৯৩টি নোটিশ দেওয়া হয় ট্যানারি শিল্প মালিকদের। তাতেও কোনো অগ্রগতি নেই কাজের। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি চলতি বছরের জুনের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর না হলে প্লট বাতিল করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
 
এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি হাজারীবাগ ও সাভার ট্যানারি শিল্প এলাকা পরিদর্শন করেছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) প্রতিনিধি দল। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে পবা প্রতিনিধি দল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরাদ্দকৃত ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে প্রায় সবগুলোই ৬ তলাবিশিষ্ট শিল্পভবন হওযার কথা। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত ১৫৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১টি প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাই হয়ে তৃতীয় তলার কাজ চলছে। ৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে বা হওয়ার পথে। ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের পাইলিং সম্পন্ন করেছে বা চলছে, বেইজ ঢালাই হয়েছে বা হচ্ছে, গ্রেটবিম ঢালাই হয়েছে বা হচ্ছে। ৭৬টির সীমানা দেয়াল দেওয়া হয়েছে। ১৪টির সীমানা দেয়াল,গার্ড রুম কিছুই করা হয়নি। ২৫টির সাইন বোর্ড নেই (এর মধ্যে ৮টির সীমানা দেয়াল,গার্ড রুম কিছুই করা হয়নি)।
 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ পর্যন্ত  ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন সম্পন্ন করেছে। ৩৬ শতাংশ ফাউন্ডেশনের কাজ করছে এবং ৫৮ শতাংশ শিল্পভবন নির্মাণে কিছুই করছে না।
 
কাজের ধীরগতি নিয়ে পবা প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয় প্রকল্প পরিচালকের। তিনি জানিয়েছেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লে-আউট অনুমোদন করা হয়েছে। সিইটিপিতে সাধারণত প্রতিদিন ৫ হাজার ঘনমিটার এবং ঈদের সময় ২০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। ক্রোমিয়াম আলাদাভাবে পরিশোধন করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পুনরায় ব্যবহার করা হবে। সিইটিপি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা
 
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ২০১৫ সালের জুন মাসের মধ্যে সিইটিপির নির্মাণ সম্পন্ন হবে। এটি একটি বায়োলোজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। তারা শংকিত যে বর্জ্যের অভাবে তারা যথাসময়ে সিইটিপি কমিশনিং এ সমস্যায় পড়বেন।
 
তবে কাজের বর্তমান অগ্রগতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। জুনের মধ্যে হাজারীবাগ হতে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
 
পবা প্রতিনিধিদল সরেজমিন পরিদর্শন শেষে শনিবার (১৪ মার্চ) সকালে কলাবাগানের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায়।  
 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাজারীবাগের ট্যানারিসমূহ দীর্ঘ ৬৫ বছর বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ করে যাচ্ছে। মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তিসহ বুড়িগঙ্গা আজ একটি মৃত নদী। ট্যানারিসমূহ দৈনিক ২২ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলছে। এছাড়াও  প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। সর্বোচ্চ উৎপাদনকালে এর পরিমাণ প্রায় ২০০ মেট্রিক টন।

এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এসিড, হাইড্রোজেন সালফাইড, ফরমিক এসিড, ব্লিচ, ডাই, তেল, চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত অনেক ভারী ধাতু, চুন, পশুর মাংস, দ্রবীভূত চুল, চর্বি, লবন ইত্যাদি। এসব বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যাদি পানি, বায়ু, মাটি দূষণসহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে।
 
সংবাদ সম্মেলনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়, এরমধ্যে- শিল্প মালিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। বিদ্যমান আইনে সংশ্লিষ্ট মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে তারা দ্রুততম সময়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে, যন্ত্রপাতি স্থাপন করে উৎপাদনে যায়।

এছাড়া চলতি বছরের  জুন মাসের মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে উৎপাদন শুরু এবং একই সময়ে সিইটিপি চালু করা। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন শুরু এবং একই সময়ে সিইটিপি চালু করা না হলে সিইটিপি অকার্যকর হয়ে পড়বে। এতে দূষণ অব্যাহত থাকবে এবং সিইটিপি নির্মাণে ব্যয়িত বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হবে। জুন মধ্যে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে উৎপাদন শুরু করবে না তাদের প্লট বাতিল করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
 
হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ট্যানারির মালিকদের কাছ থেকে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৬০৯.৭৫ কোটি  টাকা আদায় করা।
 
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধের আলোকে বক্তব্য তুলে ধরেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। উপস্থিত ছিলেন পবার নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ,  সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, মো. মুসা, পিসের মহাসচিব ইফমা হোসাইন, মডার্ন ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।