ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খুলনা বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট ফাঁকির মোচ্ছব

মাহবুবুর রহমান মুন্না , স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৫
খুলনা বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট ফাঁকির মোচ্ছব ছবি : মানজারুল ইসলাম, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: গত বছরের মতো্ এবারও খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ভ্যাট ফাঁকির মোচ্ছব চলছে। মেলায় আগত স্টল মালিকরা এ ব্যাপারে মানছেন না কোনো নীতিমালা।

এ নিয়ে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিতে গেলে ‘মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে’ বলে রাজস্ব কর্মকর্তাদের হুমকি দিচ্ছে মেলা কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, এবারের বাণিজ্যমেলায় সাধারণ পণ্যের ভ্যাটের হার বিক্রয়মূল্যের ৪ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা হয়েছে। স্টলগুলোতে ক্যাশ রেজিস্টার রাখার নিয়ম রয়েছে। বেচাবিক্রি যা হবে তার সবই এই ক্যাশ রেজিস্টারে বিক্রি হওয়া পণ্যের নাম, সংখ্যা-পরিমাণ এবং টাকার পণ্য বিক্রি করা হয়েছে ---তার সবই লিখে রাখার কথা ক্যাশ রেজিস্টারে। কিন্তু বাস্তবে কি এসব নিয়ম পালিত হচ্ছে? না, ক্যাশ রেজিস্টার ঠিকই রয়েছে কিন্তু ব্যবসায়ীদের কেউই তা ব্যবহার করছেন না।

কোনো প্রকার ক্যাশ মেমোও ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে বিক্রি হওয়া পণ্যের সংখ্যা-পরিমাণ ও এসবের মূল্যমান কতো তা  জানার উপায় থাকছে না। আর এই ‘না থাকায়’ ভ্যাট পরিশোধের সময় সময় স্টল মালিকরা বিক্রি কম দেখিয়ে ভ্যাট পরিশোধ করছেন। এতে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সচেতন মহলের অনেকেই বলছেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা সারাক্ষণ মেলায় অভিযান চালিয়ে গেলে এবং মেলায় তাদের অফিস থাকলে স্টলগুলো থেকে সরকার আশানুরূপ রাজস্ব পেত।

মেলায় ভ্যাটফাঁকির দু’একটা নমুনা:লিজা ড্রাই ফুড থেকে এক হাজার টাকার অধিক মূল্যের খাদ্য সামগ্রী কিনেছেন বীমা কর্মকর্তা অনিক। ক্রয়ের পর বিক্রেতা তাকে কোনো ক্যাশ মেমো দেননি। তিনিও চাননি।

এ ব্যাপারে বিক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাশ মেমো চাইলে দেওয়া হয়; না চাইলে দেই না।

অনুরূপভাবে হামকো প্ল্যাস্টিকের প্যাভিলিয়ন থেকে নঈম নামের এক ক্রেতা প্রায় তিন হাজার টাকার প্ল্যাস্টিক সামগ্রী কিনেছেন। ক্রয়ের পর বিক্রেতা তাকে কোনো ক্যাশ মেমো দেননি।

এ বিষয়ে হামকো প্ল্যাস্টিকের বিক্রয়কর্মী রবিউল বলেন, প্ল্যাস্টিক সামগ্রী বিক্রি করলে ক্যাশ মেমো দেওয়া হয় না।

মেসার্স সাদিয়া এন্টারপ্রাইজে ‘একটি নন স্টিকি হাঁড়ি সেট কিনলে ১০টি আইটেম ফ্রি’—এমন বাহারি অফার দিয়ে ক্রেতা টানছেন তারা। মনকাড়া লোভনীয় অফারে ক্রেতার ভিড়ে বিক্রেতাদের কথা বলার ফুরসত নেই। প্রতি মিনিটে হাজার হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করছেন তারা। কিন্তু কাউকেই দিচ্ছেন না ক্যাশ মেমো।

একই অবস্থা ফরেন জোন, ঢাকা স্টার কাবাবসহ বেশ কিছু স্টলে।  

এসব দোকানের বিক্রেতারা বলেন, খুলনার মেলায় বেচা কেনা কম। একারণে ক্যাশ মেমো দিই না।

‘এসব বিক্রেতার কাছে বিক্রি করা পণ্যের ভ্যাট কিভাবে পরিশোধ করবেন তাহলে?’- জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘একটা বুঝ-ব্যবস্থা ঠিকই করে নেব। ’

শুক্রবার (২০ মার্চ)  বিকেলে সরেজমিনে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানের মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের যেমন ভিড় রয়েছে তেমনি হরতাল-অবরোধের মধ্যেও বিক্রি গত বছরের তুলনায় ভালো। কেবল ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার জন্যই বিক্রেতারা ‘বিক্রি কম হচ্ছে বলছেন’। তারা ক্যাশ মেমো না দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বিক্রি বেশি হওয়া সত্ত্বেও ‘বিক্রি কম হচ্ছে’ বলে দাবি করছেন। এসব মূলত ভ্যাট ফাঁকি দেবার মওকা।  

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের ইন্সপেক্টর নঈম মীরন শুক্রবার বিকেল ৫টা ১৯ মিনিটে বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যাট আদায়ের জন্য বাণিজ্যমেলায় আমাদের কোনো অফিস নেই। তবে ভ্যাট সংক্রান্ত কাজের জন্য আমরা মেলায় অভিযান চালিয়েছি। সেখানে যদি আমরা কঠোরতা অবলম্বন করতে যাই তাহলে মেলা কর্তৃপক্ষ ‘মেলা বন্ধ করে দেব’ বলে আমাদের হুমকি দেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে আমরা ঠিকমতো ভ্যাট আদায় করতে পারছি না।

তিনি আরো জানান, গত এক মাসে এ পর্যন্ত মেলা থেকে চুক্তির মাধ্যমে ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকার ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। কিন্তু বর্ধিত ১৫ দিনের কোনো চুক্তি করাই হয়নি।

তিনি স্বীকার করেন, ‘চুক্তির মাধ্যমে না করে শতাংশের হিসাবে ভ্যাট আদায় করা হলে কয়েকগুণ বেশি রাজস্ব আদায় করা যেত। ’

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের এসি সাগর সেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি খুলনায় একদম নতুন।

স্টলগুলোর ক্রেতাদের ক্যাশ মেমো না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মেলায় অভিযান চালিয়ে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করার কাজ চলছে। ’

মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী মোঃ রাসেল আহমেদ শনিবার সকাল ১১টা ৩৩ মিনিটে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে গ্রামে আছি। এসে বিষয়টি দেখবো। ’ 

খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী ১৪তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হয়। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এবং মেসার্স চামেলী ট্রেডার্স যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় স্টল রয়েছে ১৬০টি। এছাড়া প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৮টি। মেলার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পনের দিন বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত মেলা চলবে।

মেলায় রয়েছে তৈরি পোশাক, জুতা, প্রসাধনী, জুয়েলারি, ক্রোকারিজ, খাবার এবং প্ল্যাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের স্টল। তাঁত, হস্ত ও কুটিরশিল্পের রকমারি পণ্য তো রয়েছেই। এছাড়া মেলায় শিশুদের জন্য ট্রেন, থ্রিডি মুভি ও নাগরদোলাসহ ২০টি আইটেম নিয়ে আলাদা গেম জোন রয়েছে।

** খুলনা বাণিজ্য মেলায় প্রতারণার ফাঁদ!

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।