ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খুলনা বাণিজ্যমেলা

মাঠে মেলা রাস্তায় খেলা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫
মাঠে মেলা রাস্তায় খেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: রোববার (২২ মার্চ) বেলা ১১টা ২০ মিনিট। কিশোর রাব্বী ও মুয়াজসহ তাদের সহপাঠীরা এক বুক আশা নিয়ে খুলনা বড় মাঠে (সার্কিট হাউজ ময়দান) ক্রিকেট খেলতে আসে।

ওরা সবাই খুলনা শিপইর্য়াড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। মাঠে এসে দেখে, মাস শেষ হয়ে গেলেও শেষ হয়নি খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। রাগে-ক্ষোভে হতাশ হয়ে কিশোর দলটি মেলার মাঠের পাশের রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে শুরু করে।

এ সময় কথা হয় রাব্বী ও মুয়াজের সঙ্গে। তারা বাংলানিউজকে আক্ষেপের সাথে জানায়, খুলনায় এ মাঠ ছাড়া তাদের জন্য আর কোনো মাঠ নেই। অথচ এ মাঠে এক মাসের মেলা করতে গিয়ে দুই মাস-আড়াই মাস লাগাচ্ছে।

তারা আরও বলে, এখানে এসে শুনেছি, মেলার সময় ১৫ দিন বাড়িয়েছে। এরপরও নাকি এখানে বৈশাখীমেলা হবে। এভাবে যদি মেলার সময় বাড়তে থাকে, তাহলে আমরা খেলবো কোথায়?

কয়েকজন অভিভাবক জানান, খুলনা মহানগরীর সার্কিট হাউজে চলছে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। নামে মাসব্যাপী হলেও এ মেলা প্রতি বছরই দুই-তিন মাস করে চলে। এবারও মাস শেষ হয়ে গেছে। তবুও চলছে কথিত মাসব্যাপী মেলা।

শিশু-কিশোরদের খেলার সুযোগ সীমিত করে দিয়ে এভাবে মেলা চলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্রীড়ামোদী এসব অভিভাবকরা। এটাকে শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের অন্তরায় হিসেবে দেখছেন তারা।

নগরীর হাজি মহসিন রোডের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, মেলার দখলে চলে গেছে মহানগরীর একমাত্র বৃহৎ এ খেলার মাঠটি।

তিনি বলেন, বর্তমান কম্পিউটার গেমসের যুগেও আমি নিজেই ছেলেকে বিকেল বেলা মাঠে খেলতে পাঠাতাম। কিন্তু মেলার নামে গত দেড় মাস ধরে সেটা বন্ধ। কমপক্ষে আগামী এক মাসেও এ মাঠে খেলা সম্ভব হবে না। খেলতে না পেরে ছেলে মনমরা হয়ে বাসায় বসে থাকে। এটা ছোট ছেলে-মেয়েদের মানসিক বিকাশের জন্য খুব খারাপ লক্ষণ।

মাঠের অভাবে অনুশীলন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উঠতি খেলোয়াড়েরা সমস্যায় পড়ছেন বলে জানিয়েছেন খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকরা।

তারা বলেন, মাঠ খোঁড়াখুঁড়ি করে চোখ ধাঁধানো স্টল করা। মেলা শেষে আবার তা তুলে নেওয়া- এ ধরনের কাজের কারণে খেলার বিষয়টি অবহেলায় চাপা পড়ে যায়। মানুষের চিত্ত-বিনোদন আর কোনো খেলার জায়গা নেই বলেই এসব মেলায় মানুষ যান আর ঠকে বাড়ি ফেরেন। ঘুরে-ফিরে একই স্টল, একই পণ্য- ‘একটা কিনলে ১০ টা ফ্রি’র একঘেঁয়ে হুল্লোড়। যা অধিকাংশই নকল ও নিন্মমানের।

বাংলানিউজের কথা হয় হাজি মহসিন রোডের বাসিন্দা ঢাকা ব্রাদার্স ইউনিয়নের ক্রিকেট খেলোয়াড় মাহমুদুল হক সেতুর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাণিজ্যমেলার কারণে মাসের পর মাস কেউ এখানে খেলতে পারছেন না। এতে উদীয়মান ক্রিকেট খেলোয়াড়রা প্রাকটিস না করতে পেরে হতাশায় ভুগছেন। সিনিয়র ক্রিকেটাররা জেলা স্টেডিয়াম খেলেন। সেখানকার অবস্থা খুব খারাপ। তারপরও সবাই একসঙ্গে কোনোরকমে প্রাকটিস করেন। তবে সেখানে সুযোগ পান না জুনিয়র ক্রিকেটাররা।

খুলনা আবাহনী ক্লাবের খেলোয়াড় মঞ্জুরুল ইসলাম রিম বাংলানিউজকে বলেন, সার্কিট হাউজ ছাড়া খুলনায় প্রাকটিস করার মতো ভালো কোনো মাঠ নেই। খেলা এমন একটা বিষয়, যাতে প্রতিদিন প্রাকটিস না করলে ফিটনেস থাকে না। বানিজ্যমেলার কারণে মাঠের জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। খেলোয়াড়রা ফিটনেস হারিয়ে ফেলছেন। মেলা যেখানে এক মাস হওয়ার কথা সেখানে মাসের পর মাস হচ্ছে।

খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম আহসান বাংলানিউজকে বলেন, ২০০ বছর আগে থেকে সার্কিট হাউজের এ মাঠে খেলাধুলা হয়। বাণিজ্যমেলা নিয়ে অনেক প্রতিবাদ জানিয়েছি। কয়েক বছর আগে এ মেলা চলাকালে আমরা ভেঙেও দিয়েছি। তারপরও এ মেলা অব্যাহত আছে।

তিনি জানান, খুলনায় মাত্র তিনটি মাঠ। এর মধ্যে সর্বসাধারণের জন্য সার্কিট হাউজ মাঠ। যেখানে প্রতিদিন এক হাজার ছেলে খেলা ও অনুশীলন করে। আর খুলনা আবু নাসের স্টেডিয়াম ইন্টারন্যাশনাল ভেন্যু হওয়ায় প্রাকটিস করার সুযোগ নেই। এছাড়া জেলা স্টেডিয়ামও সর্বসাধারণের জন্য নয়।

তিনিও সার্কিট হাউজ মাঠে মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।

মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী মিয়া মো. রাসেল আহমেদ রোববার বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে বাংলানিউজকে বলেন, আমি গ্রামের বাড়িতে আছি। আগামীকাল (সোমবার) আসেন, কথা হবে।

খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে গত ১৪ ফেব্রæয়ারি থেকে মাসব্যাপী ১৪তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরু হয়েছে। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এবং মেসার্স চামেলী ট্রেডার্স যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় স্টল রয়েছে ১৬০টি। এছাড়া প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৮টি। মেলার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পনের দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় রয়েছে তৈরি পোশাক, জুতা, প্রসাধনী, জুয়েলারি, ক্রোকারিজ, খাবার এবং প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের স্টল। তাঁত, হস্ত ও কুটির শিল্পের রকমারি পণ্যতো রয়েছেই। এছাড়া মেলায় শিশুদের জন্য ট্রেন, থ্রিডি মুভি ও নাগরদোলাসহ ২০টি আইটেম নিয়ে আলাদা গেম জোন রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘন্টা, মার্চ ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।