ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অবরোধের ৩ মাস

স্বাভাবিক গতিতে মংলা বন্দর

মাহবুবুর রহমান মুন্না ও ইনজামামুল হক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৫
স্বাভাবিক গতিতে মংলা বন্দর ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: হরতাল-অবরোধের প্রভাব বলতে গেলে নেই মংলা বন্দরে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের টানা তিন মাস অবরোধ ও উপযুপরি হরতালের মধ্যেও বন্দরে কাজ চলছে স্বাভাবিক গতিতে।

প্রথম দিকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কিছুটা বিঘ্নিত হলেও এখন তা একদমই নেই। পরিসংখ্যান বলছে, অবরোধের তৃতীয় মাসেই বেশি কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইফলাইন মংলা সমুদ্রবন্দর।

বন্দর-অভ্যন্তরে পণ্য ওঠানামা যেমন স্বাভাবিক, তেমনিভাবে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিও চলছে সাধারণ কর্মদিবসের মতোই। কাস্টম হাউসে শুল্কায়ন ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রেও হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েনি এখানে। বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

মংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, টানা হরতাল-অবরোধের প্রথম দিকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কিছুটা বিঘ্নিত হলেও এখন এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে মংলা বন্দর। নিরাপত্তার মধ্যেই স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে।

তারা আরও জানান, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নেওয়া হয় মূলত সড়কপথের তুলনায় নদীপথেই বেশি। ফলে অবরোধ-হরতালের প্রভাব তুলনামূলকভাবে সব সময় কমই পড়ে থাকে মংলা বন্দরে। সপ্তাহের প্রথম দিকে সড়কপথে পণ্য পরিবহন কম হলেও বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার বন্দর থেকে সড়ক পথে বেশি পণ্য আসা যাওয়া করে। বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘন্টা সচল থাকায় রাতের বেলাও পণ্য পরিবহন হয়।

মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মংলায় তো কোনো হরতাল-অবরোধ নাই। কোনো
সরকারের সমায়ই এই বন্দরে হরতালের তেমন প্রভাব কখনোই ছিলো না। এখনও নেই। টানা অবরোধের মধ্যেও বন্দরের কাজ স্বাভাবিক।

তিনি জানান, বর্তমানে আগের মতোই মংলা বন্দরের মাধ্যমে থেকে সার, জ্বালানি তেল, লবণ, সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি এবং পাট, পাটজাত পণ্য ও চিংড়ি রপ্তানি করা হচ্ছে।

মংলা বন্দরের ট্রাফিক সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে যথাক্রমে ২৫টি, ২৮টি এবং ৩৬টি জাহাজ এসেছে এই বন্দরে। এই তিন মাসে মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে মোট ৯ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৪১ মেট্রিক টন (২৮৫২২৪ মে. টন, ২৬৯৪৪৭ মে. টন এবং ৩৮৬৬৭০ মে. টন) বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

একই সময়ে এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ৩৩ হাজার ১৮৯ মেট্রিক টন (১১৮৬৯ মে. টন, ১২৬৮৪ মে. টন ও ৮৬৩৬ ম. টন) পণ্য। ..

২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানির লক্ষ মাত্রা ছিলো ৩১ লাখ মেট্রিক টন। আর এ সময় এই বন্দর নিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় ৩৫.৪৪ লখ মেট্রিক টন।  

আর চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে মংলা বন্দরে জাহাজ এসেছে যথাক্রমে ৪৪টি ও ২৫টি। এই দুই মাসে পণ্য আমদানি
হয়েছে ৪৯৭১৭১মে. টন ও ২৩৯৭৭৮ মে. টন পণ্য ও অনান্য দ্রব্য।

এ-বন্দর দিয়ে জানুয়ারিতে ৯১৫৯ মে. টন ও ফেব্রুয়ারিতে ৭৪৮২২ মে. টন পণ্য ও অনান্য দ্রব্য রপ্তানি হয়েছে। মার্চেও রপ্তানি সন্তোষজনক।

চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের মংলা বন্দরের আমদনি-রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩০.২৫ লক্ষ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি-রফতানি হয়েছে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) গোলাম মোক্তাদির বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধের প্রভাব নেই মংলা বন্দরে। আগের মতোই চলছে সব ধরনের স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞ। নিত্যদিনকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এখন স্বাভাবিক।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ ফাইন্যান্স অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যেও মংলা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পুরোটাই এখন স্বাভাবিক। এ-কারণে হরতাল-অবরোধেও সন্তোষজনকভাবে রাজস্ব আদায় হয়েছে।

মংলা বন্দর ব্যবহারকারী  কমিটির সমন্বয়কারী ও খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর  সহ-সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিকে অনেক সমস্যার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে বেশি খরচে মংলা বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করতে হলেও এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

তিনি জানান, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধ পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কেউ মানছে না তাদের কর্মসূচি।

** প্রভাব পড়েনি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে
** চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে পণ্য খালাস
** ক্ষতি পুষিয়ে হিলি বন্দর স্বাভাবিক

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।