ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গৃহস্থালির কাজে প্লাস্টিক পণ্যের বিপ্লব

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৫
গৃহস্থালির কাজে প্লাস্টিক পণ্যের বিপ্লব ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে গৃহসামগ্রীতে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। দেশের প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

আজকাল তিন টাকার ঢাকনা (সরপোশ) থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা দামের ওয়ারড্রবও ব্যবহার হচ্ছে দেদারছে। রক্ষণাবেক্ষণে ঝামেলা কম আর দামেও বেশ সস্তা হওয়ার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে।
 
সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, গত দুই বছরের ব্যবধানে দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ৫ গুণের বেশি বেড়েছে। প্লাস্টিকের তৈরি বালতি, গ্লাস, জগ, রেক, চেয়ার, টেবিল, টিফিনবক্স, প্লেট, জার, আলমারি, ড্রাম, বদনা, পানির বোতলসহ গৃহস্থালির নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে।
 
এসব পণ্য দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি দামেও সস্তা। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়াও সহজ। ফলে সহজেই সর্বসাধারণকে আকর্ষণ করছে প্লাস্টিকের পণ্য। যে কারণে এক সময় খেলনা সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার হওয়া প্লাস্টিক এখন গৃহসজ্জার অন্যতম প্রধান উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
এখন প্রায় সকল মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারেই গৃহ সাজাতে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিকের রকমারি পণ্য। আর নিম্নবিত্তের আসবাব হিসেবে প্লাস্টিকের সামগ্রীই চাহিদা এখন সবার শীর্ষে। বই-খাতা, কাপড়, জুতা রাখতে প্লাস্টির র‌্যাক প্রায় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অতিথি আপ্যায়নে চেয়ার-টেবিল, বাথরুমে বালতি-মগের ব্যবহার হচ্ছে দেদারছে।
 
রয়েছে বাচ্চাদের টিফিনের বহনের জন্য টিফিনবক্স। আর প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রীর স্কুলব্যাগ খুঁজলেই পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের পানির বোতল। এসব প্লাস্টিকের পণ্য যেমন দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করছে, তেমনি ক্রেতাদের চাহিদার কারণে বিদেশ থেকেও আমদানি করা হচ্ছে।
 
দেশে আরএফএল, বেঙ্গল, তাজ, এনপোলি ও জেমি কোম্পানির প্লাস্টিকের পণ্য ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষ আছে বলে জানিয়েছেন প্লাস্টিক সামগ্রীর পণ্য বিক্রেতারা। একই দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিকের পণ্য বিক্রি করেন এমন কমপক্ষে ১৫ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়েছে বাংলানিউজের।
 
এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের ন্যাশনাল ক্রোকারিজ। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক রোমান বাংলানিউজকে জানান, ৮ বছরের বেশি সময় ধরে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। দিন দিন প্লাস্টিক পণ্যে মানুষের চাহিদা বাড়ছে। এখন গৃহের প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যই এখন তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক দিয়ে। লোকজন এগুলো ব্যবহারও করছেন আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে। তার দাবি,  দুই বছর আগের তুলনায় এখন প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার হচ্ছে ৫ গুণের বেশি।
 
তালতলা মার্কেটে প্লাস্টিক সামগ্রীর আর এক প্রতিষ্ঠান ক্রোকারিজ বাজার-২। এই প্রতিষ্ঠানটির হিসাবরক্ষক রেজাউল জানান, এক সময় প্লাস্টিকের শুধু খেলনা সামগ্রীই বিক্রি হতো। এখন বাড়িতে লাগে এমন প্রায় সব ধরনের প্লাস্টিক পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। দেখতে সুন্দর ও দাম কম হওয়ার কারণে প্লাস্টিকের পণ্যে মানুষের চাহিদাও অনেক বেড়েছে।
 
চহিদা কেমন বেড়েছে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুই বছর আগে যদি দিনে গড়ে ১০০ টাকার প্লাস্টিকের পণ্য বিক্রি হতো। এখন তা বেড়ে হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গৃহের প্রায় সকল পণ্যই এখন বিক্রি হচ্ছে সমান তালে। এক সময় মানুষ চাউল রাখতো টিনের বাক্সে। এখন চাউল রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিকের ড্রাম। পানি ধরে রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রাম। ফলে প্লাস্টিকের ড্রামের চাহিদাও বেড়েছে। ’
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় কোম্পানির তৈরি প্লস্টিকের টিফিন বক্স ৮০ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যায়। বিদেশি কোম্পানির টিফিনবক্স পাওয়া যায় ১২০ টাকা থেকে ৩’শ টাকায়। পানির বোতবোতলের দাম ৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা। বালতির দাম ৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। আর ড্রামের দাম ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
 
কোম্পানি ভেদে প্লাস্টিকের র‌্যাক পাওয়া যাবে ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। চেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। টেবিল আছে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দামের। আছে ৪ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের বিভিন্ন আলমারি। একই দামে পাওয়া যাচ্ছে ওয়ারড্রবও।
 
সার্বিক বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় প্রাণ আরএফএল গ্রুপের বিপনণ পরিচালক কামরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্লাস, প্লেট ছাড়া ১৯৯০ সালের আগে প্লাস্টিকের তেমন কোনো পণ্য তৈরি হতো না। তার আগে প্লাস্টিক দিয়ে শুধু খেলনা তৈরি হতো। তবে এখন প্লাস্টিক দিয়ে বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরি হচ্ছে। চেয়ার-টেবিলের পাশাপাশি এখন প্লাস্টিক দিয়ে ওয়ারড্রব এমনকি আলমারিও তৈরি হচ্ছে।
 
আগে এসব পণ্য কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। কিন্তু কাঁচামাল হিসেবে কাঠ এখন খুব দামি ও দুষ্প্রাপ্য। এসব কারণে আমরা গবেষণা করে প্লাস্টিকের নতুন নতুন পণ্য নিয়ে এসেছি। এতে মানুষ কম দামে ভালো পণ্য পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে গাছ ধ্বংস না হওয়ার কারণে পরিবেশের  ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। ’
 
তিনি বলেন, ‘আগে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার  এক থেকে দেড় কেজির বেশি ছিলো না। এখন মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ৫ কেজির ওপরে। গত দুই তিন বছরে নতুন নতুন অনেক পণ্য এসেছে। আগে যেটা কেউ চিন্তাই করেনি। ওয়ারড্রব, আলমারি থেকে শুরু করে গৃহস্থালির প্রায় সব পণ্য তৈরিতে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। অটোমোবাইল পার্টস, বৈদ্যুত্যিক পণ্যসহ সকল ক্ষেত্রেই যাতে প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার হয় আমাদের সেরকম পরিকল্পনা রয়েছে।
 
‘কিভাবে প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি করেন’—জানতে চাওয়া হলে কামারুজ্জামান বলেন, সাবুর মতো দানাদার প্লাস্টিক রেজিন দিয়ে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয়। রেজিন মেশিনের মধ্যে দিলে ডাইস অনুযায়ী পণ্য তৈরি হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।