ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির কারণ ব্রিটিশ ঋণ আইন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫
‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির কারণ ব্রিটিশ ঋণ আইন’

ঢাকা: ব্রিটিশ আমলের সরকারি ঋণ আইনে ব্যাংকগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনা পরিচালনা হওয়ায় আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিসহ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটছে। এ আইন বাংলাদেশ সরকারকে কোনো স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করে না।

যে কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে পারছে না সরকার।
 
রোববার (০৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন তথ্য উপস্থাপন করেছে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি সিঅ্যান্ডএজি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে অতি দ্রুত অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
 
কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. আফসারুল আমীন, শামসুল হক টুকু, মঈন উদ্দীন খান বাদল, এ কে এম মাঈদুল ইসলাম, রুস্তম আলী ফরাজী এবং ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশ নেন। সিঅ্যান্ডএজি মাসুদ আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অডিট অফিসের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
 
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের বাংলাদেশের সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং রিপোর্টিংয়ের ওপর বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বেসিক ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন কমিটির সদস্যরা। এসব অর্থ কেলেঙ্কারির জন্য তারা দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। তবে সিঅ্যান্ডএজি অফিসের দেওয়া প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের জন্য ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ সরকারের সময় প্রণয়ন করা সরকারি ঋণ আইন (Public Debt Act) আইনকেই দায়ী করা হয়েছে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আইন বাংলাদেশ সরকারকে কোনো স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করে না। তাই ব্যাংকগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। বর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইনটিকে নতুন করে প্রণয়নেরও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি সিঅ্যান্ডএজি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে অতি দ্রুত অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে।
 
বৈঠকে বিক্রয়যোগ্য সিকিউরিটি আইনটি যথাযথ নয় বলে জানায় সিঅ্যান্ডএজি কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পের হিসাব ব্যবস্থাপনাও সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি। কমিটি ঋণ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংসদের আগামী অধিবেশনের মধ্যে বিক্রয়যোগ্য সিকিউরিটি আইনটি সংসদে উপস্থাপন এবং যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প ছক প্রণয়নের আগে সিঅ্যান্ডএজির সম্মতি নেওয়ার সুপারিশ করে।
 
বৈঠকে বৈদেশিক ঋণ সার্ভিসিং, সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ), জাতীয় সঞ্চয় স্কিম, বাজেট অভিক্ষেপন, সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনার অভাব আনুষঙ্গিক দায়, ডিএমইউ’র ঋণ উপাত্ত সংরক্ষণে দুর্বলতা, বৈদেশিক সাহায্য বাজেটিং এবং হিসাব উইং (ফাবা), অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়ে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি ঋণ সার্ভিসিং বিষয়টি তাৎক্ষণিক অনুজ্ঞাপত্র দিয়ে সিঅ্যান্ডএজিকে অবহিতকরণ, জিপিএফ তহবিলায়িতকরণ, জাতীয় সঞ্চয় স্কিম সম্পর্কে সিঅ্যান্ডএজি এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিতকরণ, ঋণ রেকর্ডিং এবং হিসাব রক্ষণ প্রক্রিয়ায় অসংগতি দূরীকরণ এবং একটি সুসঙ্গত রিপোর্টিং পদ্ধতি প্রণয়নের সুপারিশ করে।
 
এছাড়া বৈঠকে সম্পূরক বাজেট সংসদে উত্থাপনের আগে অতিরিক্ত ব্যয়ের হিসাব সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটিতে উপস্থাপনের মাধ্যমে এর যৌক্তিকতা নিরূপণ সাপেক্ষে সংসদে উত্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৫
এসএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।