ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কেন এই লুকোচুরি?

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
কেন এই লুকোচুরি? ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এবার রাজধানীতে গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটের পাশাপাশি ১৬টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার থেকে অস্থায়ী হাটগুলোতে পশু উঠবে।

এর আগে কোন অস্থায়ী হাটেই পশু তোলা যাবে না।

তবে পুলিশের এ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে বুধবার থেকেই রাজধানীর ভিতরের অস্থায়ী হাটগুলোতে গরু আসতে শুরু করেছে। এ জন্য অনুমোদিত প্রতিটি  অস্থায়ী পশুর হাটের পাশেই গড়ে উঠেছে আর একটি সাবহাট। অর্থাৎ রাজধানীর ভিতরে এখন অস্থায়ী পশুর হাটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২টিতে।

পুলিশ সদস্যদের সামনেই দিনের আলোতে রাজধানীর ভিতরে ও অনুমোদনহীন হাটে গরু ঢুকলেও তা বন্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কাউকে।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর ভিতরে অস্থায়ী পশুর হাটগুলোতে গরু আসার কোন তথ্য আমরা পাইনি। নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবারের আগে রাজধানীর ভিতরে কোরবানির গরু আসবে না।
 
এ সময় অনেক হাটে গরু আসতে শুরু করেছে এবং অনুমোদনহীন হাটে গরু তোলা হচ্ছে এমন প্রশ্ন করলে? তিনি বলেন, ১৮ তারিখ থেকে কোরবানি কেন্দ্রিক আমাদের ফোর্স মাঠে নামবে। এ ধরণের কোন অনিয়ম হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
 
অনুমোদিত অস্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১০টি ও উত্তর সিটি করপোরেশনে ৬টি পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে রয়েছে- রামপুরার আফতাবনগর হাট, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজার, উত্তর শাহজাহানপুর রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ।
 
এছাড়া কমলাপুরের গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, ধুপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগের মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, জিগাতলা-হাজারীবাগ মাঠ ও লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠকে অস্থায়ীভাবে কোরবানির পশুর হাট হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনুমোদিত অস্থায়ী হাটগুলোতে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত কোন গরু রাখা না হলেও সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী, ঠিকাদাররা ও পরিচালনা কমিটির সবাই প্রস্তুত হাটে গরু তুলতে। প্রতিটি হাটে গরু বাধতে লাইন ধরে বাঁশের বেড়া ও খুঁটি বসানো হয়েছে।

বিকাল ৪টার দিকে গোপীবাগে গিয়ে দেখা যায়, সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের পিছনের অস্থায়ী গরুর হাটটিতে বাঁশের খুঁটি পুতে গরু ওঠানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ট্রাক বোঝাই করে গরু আসতেও দেখা গেছে হাটটিতে।

তবে ট্রাক থেকে গরু নামিয়ে ওই হাটে না তুলে কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা আর একটি হাটে (অনুমোদনহীন হাট) তোলা হচ্ছে। সেখানে ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও ঠিকাদার সব পক্ষের লোককে দেখা গেছে।
 
এই হাটে ১৯টি গরু নিয়ে আসা রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম জানান, বুধবার তিনি হাটে গরু তুলেছেন। ঠিকাদাররা বলেছেন দুই দিনের জন্য এখানে গরু রাখতে। শনিবার থেকে মূল হাটে গরু রাখা যাবে।
 
তিনি বলেন, এখানে গরু রাখার কারণে ক্রেতারা খুব কম আসছেন। যারা আসছেন তারা দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। অথচ প্রতিদিন গরুর খাবার বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে।

সেখানে উপস্থিত এক ঠিকাদার বলেন, ট্রাকে করে গরু আসছে। কিন্তু গরু হাটে তোলা হচ্ছে না। কারণ পুলিশ হাটে গরু তুলতে বাধা দিচ্ছে। তাই পাশেই অন্য একটি স্থানে শুক্রবার পর্যন্ত গরু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
 
উত্তর শাহজাহানপুর রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠেও একই চিত্র দেখা গেছে। কোরবানির অস্থায়ী এই পশুর হাটটির প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও সেখানে কোন গরু নেই। তবে হাট থেকে কয়েক গজ দক্ষিণে গিয়েই দেখা গেলো গরু আর গরু। রেলওয়ে কলোনির ভিতরে হাটের মতোই বাঁশের খুঁটি পুতে সারি সারিভাবে গরু রাখা হয়েছে। আর সেখানে ভিড় করছেন অসংখ্য ক্রেতা দর্শনার্থী।

এই হাটটির ইজারাদারদের একজন সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, হাটের চৌহদ্দির (সীমানা) মধ্যে কোন গরু আসছে না। কারণ পুলিশ পাহারা দিচ্ছে, হাটের মধ্যে গরু ঢুকতে দিচ্ছে না।
 
এ সময় হাটের পাশেই বাঁশের খুঁটি পুতে গরু রাখা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই হাটের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমাদের দায়িত্ব আমাদের হাটের ভিতরে গরু আসলে তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
 
কিন্তু ব্যবসায়ীরা যখন প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ওখানে (কলোনির ভিতর) হাট আপনারাই তৈরি করে দিয়েছেন’ তখন তিনি বলেন, ঢাকার বাহির থেকে যারা গরু নিয়ে এসেছেন তারা গরু কোথায় রাখবেন? সিটি কর্পোরেশনের মানুষ আসছে। তারা হাটে গরু তুলতে বাধা দিচ্ছে। এ জন্য আমরা ওখানে গরু রাখার ব্যবস্থা করেছি। শনিবার সব গরু মূল হাটে চলে আসবে।  
 
ঝিনাইদহ থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী ইসমাইল বলেন, আমাদের জানানো হয়েছে হাটে গরু উঠতে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্যই গরু নিয়ে এসেছি। ১৭ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিয়ে ১৪টা গরু নিয়ে এসেছি। কিন্তু আসার পর মূল হাটে গরু তুলতে না দিয়ে, এখানে রাখতে বলেছেন ঠিকাদাররা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
এএসএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।