ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাভারে কর মেলা যেভাবে হলো!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
সাভারে কর মেলা যেভাবে হলো! ছবি: জাহিদ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মঞ্চে সিংহাসন আকৃতির বিশাল বিশাল চেয়ার। মাঝেরটির বিশালতা চোখে পড়ার মতো।

আশেপাশে আরো তিনটি চেয়ার। সামনে সাকুল্যে ২৭টি চেয়ার। তাতে উপবিষ্ট হাতেগোনা কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। অবশিষ্টরা কেউ মঞ্চ সজ্জাকারী।

সংবাদমাধ্যম কর্মীদের বাদ দিয়ে বাকিরা মেলায় থাকা স্টলগুলোর পরিচালক।

এ চিত্রই দেখা গেল সাভারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-১২ আয়োজিত প্রথমবারের আয়কর মেলায়।

মেলায় উপস্থিত থাকতে পারেননি অনুষ্ঠানের পূর্বনির্ধারিত সভাপতি কর অঞ্চল-১২’র কর কমিশনার শাহীন আক্তার। তিনি একই সঙ্গে আবার কর অঞ্চল-১২’র আয়কর মেলা উদযাপন কমিটিরও আহ্বায়ক। ছিলেন না তিনজন বিশেষ অতিথির একজন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান মোল্যাও।

তার পরিবর্তে বিশেষ অতিথির আসনে ছিলেন সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. যুবায়ের। আর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আমন্ত্রণপত্রে বিশেষ অতিথি হিসেবে সবার আগে নাম থাকা কর অঞ্চল-১২’র অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল হক।

নির্ধারিত অতিথিদের অনুপস্থিতি নিয়ে যেমন ছিল হতাশা, তেমনি হতাশার মাত্রা ছাড়িয়েছে মঞ্চের সামনে থাকা আসনে করদাতা আর সম্ভাব্য করদাতাদের অনুপস্থিতি।

১৬ কোটি মানুষের দেশে নিয়মিত আয়কর প্রদান করেন মাত্র ১২ লাখ করদাতা। এ সংখ্যাটি নিয়ে হতাশ খোদ এনবিআরও। একে নিতান্তই কম মন্তব্য করে আয়করদাতাদের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলে আসছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও।

আগামী চার বছরে আরো নতুন ৪০ লাখ করদাতাকে চিহ্নিত করার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করে দিয়েছেন তিনি। এর অংশ হিসেবে জেলার বিস্তৃতি ছাড়িয়ে এবার প্রথমবারের মতো উপজেলা পর্যায়েও আয়োজন করা হয়েছে আয়কর মেলা।
দ্রুত অগ্রসরমান রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে করমেলা হিসেবে আয়োজনটি ছিল আগ্রহ আর উৎসাহের তুলনায় একেবারেই পিছিয়ে।

সাভার পৌরসভার মিলনায়তনে অর্ধেক জায়গাজুড়ে আয়োজন করা হয় এ মেলার। হেল্প ডেস্ক, ই-টিএনআই রেজিস্ট্রেশন, সোনালীব্যাংকের বুথসহ মাত্র পাঁচটি স্টল আর মঞ্চ বাদে অবশিষ্ট যতটুকু জায়গা, মঞ্চের সামনে তাতেই ঠাঁসাঠাঁসি করে বসানো হয়েছে ২৭টি চেয়ার।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান তার বক্তব্যে অনুষ্ঠানের পূর্বনির্ধারিত সভাপতি কর অঞ্চল-১২’র কমিশনার শাহীন আক্তারের অনুপস্থিতির বিষয়টি টেনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, শাহীন আক্তার এলে আরো ভালো লাগতো। ঢাকার আয়োজনের জন্য তিনি আসতে পারেননি। আর আয়োজন সীমিত জায়গায় হলোও সাজসজ্জাও বেশ।

তবে বিপত্তি বাধে অনুষ্ঠানের সূচনাতেই। ২৭ চেয়ারের একটিতে বসে ছিলেন মাওলানা সিরাজুল ইসলাম। নাম ডাকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে গেলেন মঞ্চের ডানপাশে বক্তব্য রাখার স্থলে। যথারীতি কোরান তেলায়াত করছেন তিনি। এ সময় অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশের চরিত্র হারিয়ে উচ্চ শব্দে বেজে উঠলো গান। এখানেই শেষ নয়। অতিথিদের বক্তব্যের মধ্যেই বার বার মাইক্রোফোন নিথর হয়ে যাওয়ায় বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন বক্তারা। অস্বস্তি ছড়ায় দর্শক আসনেও।

রাজধানীর এত কাছে সাভারে এনবিআর আয়োজিত কর মেলার চিত্রটিই যদি এমন হয়, তাহলে নতুন করদাতারাই উদ্বুদ্ধ হবেন কী করে, এ প্রশ্ন করেছিলেন অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের অনেকেই।

অনুষ্ঠানের অতিথি বক্তা সমাজসেবক সালাহউদ্দিন খান নঈম আয়োজনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলানিউজকে জানান, আরো প্রচার হলে আরো করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে আয়োজনটি সার্থক হতো।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইমাম নিজের উপস্থিতি নিয়ে বাংলানিউজকে জানান, অতিরিক্ত কর কমিশনার আমার বন্ধু। তারপর এ আয়োজন আমাদের পৌরসভায়। ছুটির দিন। তাই এলাম।

অনুষ্ঠানের আরেকজন সাভার উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ শাহারিয়ার মেনজিস বাংলানিউজকে বলেন, এমপি স্যারের সঙ্গে সাভার বালিকা বিদ্যালয়ে মিটিং আছে। সেখানেই যাবো।

রেজাউল হক নামে এক মুদিব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, মাইকের আওয়াজ শুনে এখানে এসেছি।

আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল মাতবর বাংলানিউজকে জানান, আয়োজনটি একেবারেই ছোট। একটু পরিকল্পিতভাবে আয়োজন করলে আরো ভালো হতো।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আশুলিয়া সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তুহিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শুনলাম মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ শাহারিয়ার মেনজিস এখানে এসেছেন। আমি এসেছি তার সঙ্গে দেখা করতে।

মেলায় আগত ইরফান উদ্দিন রিপন নামে এক করদাতা বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, এখানে এসে কোনো সহায়তাই পাচ্ছি না। বরং অফিসের হয়রানি এখন এখানে।

হয়রানি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা। ভাবলাম মেলায় আসলে রিটার্ণ পূরণে সহায়তা পাবো। পেলাম তো নাই-ই, উল্টো বললো- এ কাগজ লাগবে, সে কাগজ লাগবে। তাই, চলে যাচ্ছি।

আমি এক ডেস্ক থেকে অন্য ডেস্কে ঘুরছি। আমাকে ফুটবল মনে করেছে! একে হয়রানি বলবো নাতো কী বলবো!- একজন করদাতার এই হৈ চৈ শুনে ছুটে আসেন অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল হক।

এ সময় সাংবাদিকরা অভিযোগকারীর নাম জিজ্ঞাসা করলে, সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নাম পরে জেনে নিয়েন। পরে সাইফুল হক এগিয়ে গিয়ে তার সমস্যা সমাধান করে দেন।

মেলায় যদি সাধারণ করদাতাদের অংশগ্রহণই না থাকে, তাহলে মেলার সার্থকতা কী! করদাতাদের উপস্থিতি না থাকলেও এ প্রশ্নই ছিলই আয়কর মেলাজুড়ে।  

এদিকে, মেলায় সোনালী ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো সাধারণ করদাতা আমাদের এখানে টাকা জমা দিতে আসেনি। যে নয়জন আয়করের টাকা দিয়েছেন, তারা সবাই সরকারি কর্মকর্তা!

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
জেডআর/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।