ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নতুন নোটের জন্য আঙুলের ছাপ

শঙ্কিত নন টাকার কারবারিরা

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
শঙ্কিত নন টাকার কারবারিরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: রাজধানীর গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় খোলা আকাশের নিচে সারিবদ্ধভাবে বসে নতুন নোট ‘কেনাবেচা’ করে থাকেন তারা। ছেঁড়া, অচল ও বড় নোট রেখে বাড়তি কিছু টাকার বিনিময়ে নতুন নোট সরবরাহ করে থাকেন নতুন টাকার এসব কারবারি।


 
টাকার এই হাট ছাড়াও গুলিস্তানের সুন্দরবন মার্কেট এলাকা ও মতিঝিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনেও নতুন নোটের কারবারিদের দেখা যায়। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ কয়েকটি প্রধান শহরেও কারবারিরা মানুষের কাছে নতুন টাকা বিনিময় করে থাকেন।
 
অভিযোগ আছে, এসব বাজারে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। যদিও এভাবে টাকা লেনদেনের কোনো বৈধতা নেই, বরং আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। তবুও যুগ যুগ ধরে এক শ্রেণীর লোকের নতুন টাকার নোট কেনাবেচাই জীবিকা।
 
প্রতি ঈদ ও অন্যান্য মৌসুমে বাংলাদেশ ব্যাংক হাজার হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে সরবরাহ করে থাকে। এবারও ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
 
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিস ছাড়াও তাদের নির্ধারিত কিছু বাণিজ্যিক শাখা থেকে এসব নতুন নোট লাইনে দাঁড়িয়ে যে কেউ পুরাতন নোটের বিনিময়ে নিতে পারবেন। তবে এসব নতুন নোটের জন্য এবারই প্রথম আঙুলের ছাপ নেওয়ার বিধান করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
 
কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কেউ যেন একাধিকবার নতুন টাকা সংগ্রহ করতে না পারেন, সেজন্য এবার নতুন এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে নতুন টাকার একজন গ্রাহক ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ দিয়ে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৭০০ টাকা পাবেন।
 
অভিযোগ আছে, ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন নোট ছাড়লে নতুন টাকার কারবারিরা একাধিকবার লাইনে দাঁড়িয়ে এই টাকা সংগ্রহ করেন ও তা খোলা বাজারে মানুষের কাছে বাড়তি টাকার মাধ্যমে বিনিময় করে থাকেন।
 
তবে এ বিষয়ে গুলিস্তানের নতুন টাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি এবার নতুন টাকা আনতে গেলে ব্যাংক আঙুলের ছাপ রাখবে, এতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে আর কত টাকা পাওয়া যায়! আমরা তো বিভিন্ন ব্যাংকের পিয়ন ও অফিসের অন্যান্য সহকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকি। কিছু বাড়তি টাকা দিলেই তারা আমাদের কাছে নতুন টাকার বান্ডিল দিয়ে দেয়।
 
আরেক কারবারি মো. সাগর বলেন, পত্রিকার মাধ্যমে শুনেছি নতুন টাকার নোটের জন্য নাকি আঙুলের ছাপ দিতে হবে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা আর ব্যাংক থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা আনবো না, ওই নিয়ম সাধারণ মানুষের জন্য করা হয়েছে।
 
এদিকে নতুন টাকার ব্যবসা ঈদ উপলক্ষে চাঙ্গা হওয়ার আশা করছেন কারবারিরা।
 
কয়েকজন কারবারি বলেন, সারা বছর কোনো রকমে ব্যবসা ধরে রাখি। তবে ঈদ উপলক্ষে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে নতুন টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। আর কয়েক দিনের মধ্যে মানুষ বাড়ি যাওয়ার সময় বড় নোটের বিনিময়ে নতুন খুচরা নোট নিতে আসবে, এ সময় ব্যবসায় ভাল অবস্থা আসবে।
 
এবার বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিজস্ব অফিস ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের একাধিক শাখার মাধ্যমে ঈদ উপলক্ষে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিরতণ করবে। এসব নতুন নোটের মধ্যে রয়েছে ২, ৫, ১০, ২০ ও ১০০ টাকার নোট।
 
নতুন টাকার কারবারিরা জানান, তারা ১০০টি নতুন নোট দিয়ে প্রত্যেকটি বান্ডিল করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে ২ টাকার প্রতিটি বান্ডিলের জন্য অতিরিক্ত ২০-৩০ টাকা, ৫, ১০ ও ২০ টাকার প্রতিটি বান্ডিলের জন্য অতিরিক্ত ৩০-৪০ টাকা এবং ৫০ টাকার প্রতিটি বান্ডিলের জন্য অতিরিক্ত ৫০-৬০ টাকা নিয়ে থাকেন। এছাড়া ১০০ টাকার প্রতিটি বান্ডিলের জন্য বাড়তি আরো ১০০ টাকা দিতে হয় বলে তারা জানিয়েছেন।
 
অন্যদিকে, কেউ ছেঁড়া ও অচল নোটের মাধ্যমে নতুন টাকা নিতে চাইলে ১০ শতাংশ কর্তন করা হয়ে থাকে নতুন টাকার এসব দোকানে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।