ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় বাড়ছে ব্যাংকের টাকা চুরি

শাহেদ ইরশাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় বাড়ছে ব্যাংকের টাকা চুরি ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কৌশলে ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনা নতুন নয়। তবে এবার খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই চুরি হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা।

যদিও গোপন ক্যামেরায় (সিসিটিভি) ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করে টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
 
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় চুরির দায়ে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড অথবা, উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও ৩৮০ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি বসবাস বা সম্পত্তি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় এরূপ অট্টালিকা বা জাহাজে চুরি করলে সবোর্চ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
 
ব্যাংকের টাকা চুরির এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় টাকা চুরি বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
 
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, শাস্তি যাই হোক তা নিশ্চিত করা না হলে ব্যাংকের টাকা চুরি রোধ করা সম্ভব নয়। চুরির শাস্তি ৩ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছর করার পরও যদি বিচার না হয়, তবে চুরি বন্ধ হবে না।
 
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন থেকে (ভবনের যেখান থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন হয়) ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পাঁচ লাখ টাকার একটি বান্ডিল হাতিয়ে নেন ভারতীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাস।

এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের যশোর শাখা থেকে চুরি হয় ২১ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়া শাখায় দিনদুপুরে ডাকাতিকালে আটজন নিহত হন। এছাড়াও জানুয়ারিতে রূপালী ব্যাংকের ফরিদপুর শাখা থেকে চুরি হয় দেড় কোটি টাকা।
 
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সুড়ঙ্গ তৈরি করে সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জের রথখোলা শাখা থেকে ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা টাকা চুরি করা হয়। একই বছরের মার্চে সোনালী ব্যাংকের বগুড়ার আদমদীঘি শাখা থেকে চুরি হয় ৩২ লাখ টাকা।
Kishorgonj_bg
জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের শতভাগ মেনে চললেই এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। কারণ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় অপরাধ করতে ভয় পায় না অপরাধীরা।

গত দুই বছরে বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরিতে জড়িতদের আটক করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করে পার পেয়ে গেলে এ ধরনের ঘটনা আরো বৃদ্ধি পাবে। চুরি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে আইনগত ব্যবস্থা নেবে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া- এটা হতে পারে না।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঢাকা অফিসকে মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে একটি চিঠি দিয়ে দীপক চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। এছাড়াও এ ঘটনা কিভাবে ঘটেছে এবং এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত কি-না তা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
এসই/এসইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।