ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বগুড়ায় আমদানিতে ধস

সিন্ডিকেট ভাঙার অপেক্ষায় চামড়া ব্যবসায়ীরা!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
সিন্ডিকেট ভাঙার অপেক্ষায় চামড়া ব্যবসায়ীরা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে কম চামড়া কেনা-বেচা হয়েছে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম মোকামখ্যাত বগুড়ার চামড়া বাজারে। ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে উত্তরাঞ্চলের সিংহভাগ ব্যবসায়ী চামড়া হাতছাড়া করেননি।

ফলে বগুড়ার মোকাম হয়ে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া যায়নি এখনও।

নিজেরাই চামড়ায় লবণ লাগিয়ে ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন উত্তরাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা। হয়তো আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে ট্যানারি মালিকরা চাহিদামতো চামড়া না পেয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দরে চামড়া কিনতে বাধ্য হবেন, এ আশায় চামড়া বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তারা। সিন্ডিকেট ভেঙে গেলে তারা চামড়া বিক্রি করবেন বগুড়ার ব্যবসায়ীদের কাছে আর বগুড়ার ব্যবসায়ীরা পাঠাবেন ঢাকার ট্যানারিতে।
 
সাধারণ ব্যবসায়ীরা না ছাড়ায় গতবারের চেয়ে এ বছর বগুড়ার মোকামে চামড়ার আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছর এ জেলা শহর থেকে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে ২ লাখ গরু ও ১ লাখ ছাগলের চামড়া বিক্রি করা হয়েছিল। অথচ এবারের কোরবানিতে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত গরু-ছাগল মিলে দেড় লাখের মতো চামড়া কিনতে সক্ষম হয়েছেন বগুড়ার ব্যবসায়ীরা। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ীর মতে, এ সংখ্যা আরও কম হতে পারে।   
 
আর সরবরাহ কম থাকায় ট্যানারি মালিকদের দেওয়া নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কোরবানির চামড়া কিনতে বাধ্য হয়েছেন এ জেলার ব্যবসায়ীরা। ফলে এ পরিমাণ চামড়ার বিপরীতে ব্যবসায়ীদের গুণতে হয়েছে গড়ে প্রায় ২২ কোটি টাকা। তবে গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪০-৫০ টাকা ও খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুটে ১৫-২০ টাকা কমে  বেচা-কেনা হয়েছে।
 
তবে এ বছর কোরবানির ঈদে এ জেলায় কি পরিমাণ পশু জবাই করা হয়েছে, তা জানাতে পারেননি জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মোঃ বজলুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। কারণ, পুরো জেলার তথ্য এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে গত বছর কোরবানিতে এ জেলায় ২ লাখ ৩৫ হাজার পশু জবাই করা হয়েছিল।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী নেতা বাংলানিউজকে জানান, ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে ট্যানারি মালিকসহ চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ৩০-৩৫ টাকা দর নির্ধারণ করে তারা।
 
বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের চামড়া বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা এ বিষয়টিকে ভালোভাবে মেনে নেননি। তাদের ভাষায়, স্বল্প দামে চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে দেন। ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে এ কাজটি করেন বলে অভিযোগ করেন এসব ব্যবসায়ীরা।

সব পণ্যমূল্যের উর্ধ্বমুখি এই বাজারে চামড়ার এতো কম দাম নির্ধারণের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না উত্তরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাই এবারের কোরবানি ঈদে উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, নওগাঁ, জয়পুরহাটসহ আশেপাশের কোনো জেলা থেকে চামড়ার বৃহৎ মোকাম বগুড়ায় কোনো চামড়া আসেনি।
 
ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে এসব জেলার ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে নিজেরাই লবণ লাগিয়ে রেখে দিয়েছেন। তারা আপতত নিজেরাই চামড়া সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ট্যানারি মালিকরা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে এসব ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করবেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত কি হবে তা জানতে আরও বেশ কিছু সময় লাগবে বলেও সূত্রটির ধারণা।
 
সরেজমিনে জানা গেছে, গত যেকোনো বছরের চেয়ে বগুড়ায় চামড়ার আমদানিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। এতে করে এখানকার ব্যবসায়ীরা শেষ পর্যন্ত চড়া দামে চামড়া কিনতে বাধ্য হয়েছেন। ট্যানারি মালিকসহ চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলোর দেওয়া নির্ধারিত দরের কোনো প্রভাবই পড়েনি এখানকার বাজারে। রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে চামড়া কিনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।  
 
শহরের চামড়ার বাজারখ্যাত বাদুরতলা, চকসূত্রাপুর ও চকযাদুরোডসহ বিভিন্ন এলাকার আবুল হোসেন, ইউসুফ আলী, আব্দুল গফুর, আকবর হোসেনসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় আকৃতির গরুর চামড়া সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকায়, মাঝারি আকৃতির চামড়া দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। । ছাগলের চামড়া রকমভেদে প্রতি পিচ ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ট্যানারি মালিকরা চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা বর্তমান বাজরের সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ কারণে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়ে চামড়া কিনতে হয়েছে।
 
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার বাংলানিউজকে জানান, উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলা থেকে এবার চামড়ার বৃহৎ মোকাম বগুড়ায় চামড়া আসেনি। এছাড়া গ্রাম ও শহর পর্যায়ে যে পরিমাণ গরু-ছাগল কোরবানি হয়েছে তার ৪০ শতাংশ চামড়াও বাজারে বিক্রির জন্য আনা হয়নি।
 
চামড়া ব্যবসায়ী এই নেতা আরও জানান, ট্যানারি মালিকরা স্বল্প দামে চামড়া কিনতে সিন্ডিকেট করে দাম নির্ধারণ করেছেন বলে তাদের মতো এ অঞ্চলের সিংহভাগ ব্যবসায়ীরা ধারণা। আর ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চামড়ায় লবণ লাগিয়ে সংরক্ষণ করছেন।
 
কারণ হিসেবে তিনি আরও জানান, প্রত্যেক বছর ঈদের দিন থেকেই ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম। ঈদের কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও ট্যানারি মালিকরা তাদের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেননি। সব মিলে চামড়া ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। এতে করে প্রতিবেশি রাষ্ট্রে চামড়া পাচার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি-না এ প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
এমবিএইচ/এএসআর                                                                                                                
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।