ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিইও সংকটে পদ্মা লাইফ

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৫
সিইও সংকটে পদ্মা লাইফ

ঢাকা: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সংকটে পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানি পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটিতে ২০১৪ সাল মার্চ মাস থেকেই সিইও পদটি খালি পড়ে আছে।



পদ্মা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সিইও নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা ও অবহেলা করায় কোম্পানির শেয়ার গ্রাহক এবং পলিসি গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছে খোদ বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

একই সঙ্গে দিনের পর দিন সিইও পদ শূন্য রেখে এই জীবন বিমা কোম্পানিটি বিমা আইন ২০১০’র ৮০(৪) ধারাও লঙ্ঘন করেছে।

আইনের এ ধারাটিতে বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ ৩ মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। তবে অপরিহার্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ সময় আরও ৩ মাস বাড়াতে পারবে।

এ আইন লঙ্ঘন করায় গত এপ্রিলে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানসহ প্রত্যেক পরিচালককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে আইডিআরএ। এরপর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সিইও সংকট কাটেনি পদ্মা লাইফের।

সিইও নিয়োগে অনিয়মের কারণে আইডিআরএ পরিচালকদের জরিমানা করলে ওই মাসেই সিইও হিসেবে এ কে এম ইলিয়াস হোসেনের নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে পদ্মা ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ।

তবে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মতবিরোধের কারণে এ দফায় ৬ মাসেও ইলিয়াস হোসেনের সিইও নিয়োগ অনুমোদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আইডিআরএ সূত্র জানা যায়, ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১৫ মে আইডিআরএ’র কাছে একটি অভিযোগ আসে। ওই অভিযোগপত্রে ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করা হয়।

এতে বলা হয়, ইলিয়াস হোসেন জীবন বিমা করপোরেশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম করেছেন।

এ অভিযোগের পরেই ইলিয়াস হোসেনের সিইও নিয়োগ অনুমোদন আটকে দেয় আইডিআরএ। তবে এ বিষয়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

পদ্মা লাইফের সিইও সংক্রান্ত আইডিআরএ’র নথিতে দেখা যায়, চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে ওই নথিতে সদস্য মো. কুদ্দুস খান তার মতামতে লিখেছেন, ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, তার পরিচয় জানা যায়নি। এ অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত এমন উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতে কারও সিইও নিয়োগের অনুমোদন আটকে রাখা ঠিক হবে না বলেও অভিমত দেন আইডিআরএ’র এই সদস্য।

এ বিষয়ে তিনি আরও উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি এই অভিযোগ দিয়েছে তদন্তের জন্য তাকে তলব করা যেতে পারে। তবে অভিযোগকারীকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ কারেন মো. কুদ্দুস খান।

আর এক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাও তার অভিমতে নথিতে ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা ইসলামী লাইফের প্রস্তাবিত সিইও’র বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আর সদস্য মো. কুদ্দুস খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা ইসলামী লাইফ কোম্পানির সিইও নিয়োগের বিষয়টি আমার নিয়ন্ত্রণে না।

তবে কোনো কোম্পানির সিইও নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সদস্যের মতামত চাওয়া হয় এবং আমরা মতামত দিয়ে থাকি। বর্তমানে পদ্মা লাইফের সিইও নিয়োগের বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে, তা আমার জানা নেই।

এদিকে, আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ থেকে পদ্মা লাইফের সিইও পদটি শূন্য রয়েছে। পদটি পূরণের জন্য আইডিআরএ থেকে প্রথমে ওই বছরের ৫ মে একটি চিঠি দেওয়া হয়।

ওই চিঠিতে সিইও নিয়োগের বিষয়ে বিমা আইন ২০১০’র ৮০(৪) ধারার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এরপরও পদ্মা লাইফ সিইও পদ পূরণের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে।

এরপর ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর আইডিআরএ থেকে পদ্মা লাইফকে আর একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে ৫ মে’র চিঠি মোতাবেক কোম্পানি সিইও নিয়োগ না করায় এবং কেন বিধি মোতাবেক সিইও নিয়োগ দেওয়া হয়নি তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

আইডিআরএ’র ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা লাইফ ১৭ ডিসেম্বর এক চিঠি দেয়। আইডিআরএ’কে দেওয়া পদ্মা লাইফের ওই চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে সিইও পদটি পূরণ করা হবে।

পরে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি পদ্মা লাইফ থেকে সিইও হিসেবে মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে আইডিআরএকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা অনুসারে, মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের বিমা কোম্পানির সিইও হওয়ার যোগ্যতা না থাকায় তার আবেদন বাতিল করে দেয় আইডিআরএ। এরপর ইলিয়াস হোসনকে সিইও হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে পদ্মা লাইফ।

সার্বিক বিষয়ে পদ্মা ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান ডা. এ বি এম জাফর উল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৫
এএসএস/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।