ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাদা সেমাইয়ে রঙিন স্বপ্নে বিভোর কারিগর

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
সাদা সেমাইয়ে রঙিন স্বপ্নে বিভোর কারিগর

বগুড়া: চিকন সেমাই। রঙটা সাদা।

কিন্তু স্বপ্নটা রঙিন। প্রত্যেক ঈদের আগ থেকেই সাদা সেমাই নিয়ে নানা স্বপ্নে বিভোর থাকেন কারিগররা। তবে সেই স্বপ্নের কতটা পূরণ হয় তা বলা বড়ই মুশকিল। তাই বলে স্বপ্ন দেখতে তো আর মানা নেই। কারণ স্বপ্নই গরীবের বেঁচে থাকার বড় অবলম্বন।
 
মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর আসন্ন। সচল হয়ে উঠেছে বগুড়ার সেমাই পল্লীর কারখানাগুলো। ব্যস্ত স্বপ্নবাজ কারিগররা। তৈরি করছেন মজাদার চিকন সাদা সেমাই। তবে বর্ষা অনেকটা বাগড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। ফলে চাহিদা থাকলেও সেমাই সরবরাহ করতে পারছেন না মালিকরা।  
 
সোমবার (২৭ জুন) জেলার বিভিন্ন এলাকার সেমাই পল্লীর কারখানাগুলো ঘুরে মালিক ও কারিগরদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য ওঠে আসে।
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেমাই তৈরির কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই। রাত-দিন সমানে তারা সেমাই তৈরি করছেন। দিনের আলোয় সেই সেমাই শুকাচ্ছেন। আবহাওয়া প্রতিকূলে গেলে বিশেষ ব্যবস্থায় হিট দিয়ে শুকানো হচ্ছে সেমাই। আর পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন সিংহভাগ নারী।
 
খ্যাতির চিকন সেমাই তৈরি হয় বগুড়ায়। দেশজুড়ে রয়েছে এ সেমাইয়ের কদর। সদর ও পাশের শাজাহানপুর উপজেলার প্রায় ১০ গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে সেমাই পল্লী। এসব গ্রামে অন্তত শতাধিক কারখানা রয়েছে। যেখানে পাঁচ শতাধিক কারিগর কাজ করেন। যার নব্বই শতাংশই নারী কারিগর। বাড়তি আয়ের জন্য অনেকেই যুক্ত হয়েছেন এ পেশায়।
 
আর তাদের হাতের ছোঁয়ায় ময়দা হয়ে যায় চিকন সেমাই। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে রমজান ও প্রত্যেক ঈদে সেমাইয়ের উৎপাদন বেড়ে যায় কয়েকগুণ। মূলত শবে বরাতের পর থেকেই শুরু হয় সেমাই উৎপাদন। গ্রামের প্রত্যেক বাড়িই যেন একেকটি কারখানা। প্রত্যেক কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ৪৮০-৫০০কেজি অর্থাৎ ২০ খাঁচি সেমাই তৈরি করা হয়।
      
রহিমা, সাবিনা, হুমাইরাসহ একাধিক নারী কারিগর বাংলানিউজকে জানান, পুরুষের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নারী কারিগর সেমাই তৈরির কাজ করে থাকেন। রমজান মাস এলে বেশির ভাগ নারী সাধারণত এ পেশায় নিজেকে যুক্ত করেন। দিন শেষে তারা ২৫০টাকা হিসেবে পারিশ্রমিক পান। এ বাড়তি আয় স্বামীর আয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। আর তাতে সংসার বেশ ভালই চলে বলে জানান তারা।
 
অয়ন সেমাই প্রোডাক্ট কারখানার ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, খ্যাতির সেমাই কিনতে দেশের প্রত্যেক জেলা থেকে পাইকাররা বগুড়ায় আসেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ট্রাক ভরে সেমাই নিয়ে যান।
 
তবে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দিনে কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা সেমাই উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে বলে এই ব্যবসায়ী জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
এমবিএইচ/জেডএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।