ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিদেশি সবজি চাষির গল্প-শেষ

বছরে বিক্রি ২৫ লাখ টাকা, লাভ ৮ লাখ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
বছরে বিক্রি ২৫ লাখ টাকা, লাভ ৮ লাখ

বগুড়া: নাটোরের নিবাস ডি-কস্তা। চাইনিজ এক নারী নাগরিকের বাবুর্চি ছিলেন।

বিদেশি সবজি চাষের সুবাদে একদিন তার সঙ্গে পরিচয় হয় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বুজরুক শোকড়া গ্রামের চাষি মো. আনসার আলীর। নিবাসই তাকে এসব সবজি বিক্রির জায়গা বাতলে দেন।
 
এই বাবুর্চির হাত ধরে ১৯৯৩ সালে চাষি মো. আনসার আলী সবজি বিক্রির বাজারের সন্ধানে ঢাকায় যান। কিন্তু নিবাস তাকে একটি জায়গায় বসিয়ে রেখে নিজেই ঢাকার সব অভিজাত হোটেল ঘুরে এসে বলেন, আপনার সবজি বিক্রির কোনো সমস্যা নেই। ঢাকার নামিদামি সব হোটেল আপনার সবজি কিনতে রাজি হয়েছে। চলেন আমরা ফিরে যাই। পরে সবজি নিয়ে আসতে হবে।


 
এরপর এই বাবুর্চির সঙ্গে আরো কয়েক বার ঢাকায় আসেন আনসার আলী। কৌশলে জেনে নেন সবজি বিক্রির স্থানগুলো। পরে একাই নিজের ফার্মে উৎপাদিত বিদেশি সবজি ঢাকার বিভিন্ন অভিজান হোটেলে বিক্রি শুরু করেন তিনি। বর্তমানে বছরে তিনি ২৫ লাখ টাকার মতো সবজি বিক্রি করছেন। সব খরচ বাদে বছরে তার লাভ থাকছে প্রায় আট লাখ টাকা।

সম্প্রতি বুজরুক শোকড়া গ্রামে গেলে নিজের ওয়েস্টার্ন ভেজিটেবলস প্রোডাকশন কৃষি ফার্ম ঘুরিয়ে দেখিয়ে এসব তথ্য জানান ভিনদেশি সবজি চাষি মো. আনসার আলী।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আনসার আলী জানান, বেশিরভাগ ফসল চাষের নির্দিষ্ট মৌসুম থাকে। ফলন দেওয়ারও একটা নির্ধারিত সময় থাকে। কিন্তু এসব সবজির ক্ষেত্রে ধরা বাধা কোনো নিয়ম নেই। বর্তমানে জমিতে বর্ষার পানি জমে থাকায় বেশ কয়েকটি জাতের সবজি চাষ আপতত বন্ধ রেখেছেন তিনি।

বর্তমান বাজারে অ্যাসপারাগাস প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, সুইটকর্ন প্রতি পিস ২০ টাকা, লোকাল লেটুস ৬০ টাকা কেজি, চেরি টমেটো ১২০ টাকা কেজি, থাই আদা ৮০ টাকা কেজি, থাই পাতা ৪০ টাকা কেজি, শিমলা মরিচ ২০০ টাকা কেজি ও পেচ পাতা ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে তার ফার্মের অ্যাসপারাগাছ ৩০০ টাকা কেজিতে বগুড়ার নাজ গার্ডেন ও রেড চেলিস এবং রাজধানীর সোনারগাঁও, রূপসী বাংলা, ওয়েস্টিনসহ বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে বিক্রি হচ্ছে, জানান তিনি।
 
এই চাষি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার আগ পর্যন্ত সবজি বিক্রি করতে তিনি সপ্তাহে দুইদিন ঢাকায় যেতেন। কিন্তু এখন যেতে হয় না। ঢাকার নামিদামি বেশিরভাগ হোটেলের কর্তৃপক্ষ অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য বুকিং দেয়। সে অনুযায়ী কুরিয়ার সার্ভিস অথবা বাসে পণ্য পাঠিয়ে দেন তিনি।

মাসে গড়ে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রি করে থাকেন তিনি। এর মধ্যে জুন-জুলাই ও নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে সবজির দাম সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ এসময় সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে উৎপাদন কম হয়। তাই দামও বেশি পাওয়া যায়, জানান আনসার আলী।
 
২০১১ সালে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারও।
 
কৃষি বিভাগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রায়ই আসেন তার ফার্ম পরিদর্শন করতে। ফসল যত্ন-আত্তির নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন তারা। এছাড়া দেশ-বিদেশের অনেকেই তার ফার্ম দেখতে আসেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, চাষি মো. আনসার আলী হাই ভেল্যু ক্রোপ চাষ করেন। বিদেশি সবজি চাষে শুধু উত্তরাঞ্চল নয় সারাদেশের মধ্যে তিনি মডেল। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তার দেখাদেখি অনেকেই এখন এ জাতীয় সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
এমবিএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।