ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট! বাড়ছে দামও

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৬
বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট! বাড়ছে দামও

ঢাকা: হঠাৎ করেই বেড়েছে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দামের দাম। পাইকারিতে প্রতি লিটারে দুই টাকা এবং খুচরায় বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা।

দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তেলের বাজারে সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম সংকটও।

 

রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। যে কারণে আধা, এক ও দুই লিটারে সব ধরনের বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। তবে বিক্রেতারা জানান, ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন আধা, এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতার পছন্দ পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল।

 

মিরপুর-১১ পল্লবীর নাহিদ রাইস অ্যান্ড ভ্যারাইটিজ স্টোরে কোনো ধরনের ছোট বোতলজাত তেল নেই। দোকানটির মালিক রাহাত হোসেন শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনো কোম্পানিই ঠিক মতো সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত দাম রাখতেই কৃত্রিম এ সংকট তৈরি করেছে। কোম্পানিগুলো কখনো বলে, সকালে তেল দেবো। আবার বলে, বিকালে দেবো। কিন্তু দিচ্ছে না। আমাদের দোকান থেকে ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের প্রধান চাহিদা থাকে ছোট বোতলজাত সয়াবিন তেল। অথচ ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি’।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ইচ্ছা করেই চলতি সপ্তাহে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ২ টাকা বেড়ে ৯৪ টাকা এবং ৫ লিটারে ১০ টাকা বেড়ে ৪৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল পরিশোধনকারী মিল মালিকরা দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশেও বেড়েছে। তাছাড়া জুলাই থেকে ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়েও বাড়তি ভ্যাট দিতে হচ্ছে। যে কারণে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দামও বাড়তি।

বোতলজাত তেলের প্রভাবে বেড়েছে লুজ (খোলা) সয়াবিন তেলের দামও। কয়েক দিন আগে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৮০ টাকা থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। একই তেল এখন ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে খোলা সয়াবিন তেলেও বেড়েছে ছয় টাকা।

মিরপুরের তেল বিক্রেতা মাহবুব বখতিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ‘একদিন আগে ১৬ লিটার তেল কিনেছি ১ হাজার ২৯০ টাকায়।   একই পরিমাণের তেল শনিবার (০৬ আগস্ট) কিনতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩৪০ টাকা। এখন ৮৪ টাকার বদলে ৯০ টাকায় বিক্রি করতে হবে’।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়,  প্রতি বছর দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন। ফলে প্রতি মাসে চাহিদা ১ লাখ ২৫ হাজার টনের। রোজার মাস ও দুই ঈদকে ঘিরে এ চাহিদা কিছু বাড়ে। ফলে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়ে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। চাহিদা বাড়লেও বাজারে ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। তারপরও খুচরা বাজারে এর দাম বাড়ছে। তবে ব্যবসায়ীদের হিসাবে এ চাহিদা রয়েছে কমপক্ষে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় দুই লাখ টনের বেশি। বাকিটা আমদানি করেই চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে তেলের কোনো ধরনের সংকট নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে ভোজ্যতেল রিফাইনার ও আমদানিকারক সংশ্লিষ্টদের দাম বাড়িয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) মুন্সী সফিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণে দেশেও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে লিটার প্রতি দুই টাকা। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল রিফাইনার ও আমদানিকারক সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেছি। তবে আমরা দেখেছি, ভোজ্যতেল রিফাইনারদের দাবি যৌক্তিক। রিফাইনারি কস্ট বৃদ্ধির কারণে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তির দিকে। তবে বাজারে কোনো ধরনের সয়াবিন তেলের সংকট নেই’।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।