ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কাঁচা চামড়া প্রস্তুত হচ্ছে সাভারের সাত ট্যানারিতে (ভিডিও)

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৬
কাঁচা চামড়া প্রস্তুত হচ্ছে সাভারের সাত ট্যানারিতে (ভিডিও) ছবি: জিএম মুজিবুর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রথমবারের মতো সাভারে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া প্রস্তুত শুরু হয়েছে। এবারের ঈদে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে ৭টি ট্যানারি প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছে।


 
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে শিল্পনগরীটি ঘুরে জানা গেছে, আজমীর ট্যানারিতে ৭ থেকে ৮ হাজার পিচ কাঁচা চামড়া দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। অ্যাপেক্স, নবারুন, রিলায়েন্স, ভলুয়া ও রুমা ট্যানারিতেও চলছে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা।
 
তবে এসব ট্যানারি থেকে যে হোয়াইট ব্লু  বর্জ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) সচল করা সম্ভব হচ্ছে না।
 
সিইটিপি একটি বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। তাই যে দু’টি মডিউল চালু করা হয়েছে তাতে সাড়ে ১২ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য দিতে না পারলে কাজই করবে না।

আজমীর ট্যানারিতে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকরা লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া বাছাই করছেন। আকার অনুযায়ী পৃথক ভাগে ভাগে ফেলছেন কাঁচা চামড়া।

আজমীর ট্যানারির শ্রমিক কাশেম বাংলানিউজকে জানান, ‘আমরা ঈদের আগে থেকেই এখানে কাজ শুরু করেছি। আজ বাছাই করা হচ্ছে, কাল মেশিনে যাবে’।
 
আজমীর ট্যানারির মালিক হাজী মো. শহিদ উল্যাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা হোয়াইট ব্লু’র কাজ এবার এখানেই করছি। তবে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় ফিনিশিং এর কাজ করতে পারছি না। ফলে দুই জায়গাতেই দৌঁড়াতে হচ্ছে। এখান থেকে হোয়াইট ব্লু’র কাজ শেষ করে হাজারীবাগে ফিনিশিং এর কাজ করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে’।

শহিদ উল্যাহ বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদের সময় ১৫ হাজার পিচ কাঁচা চামড়া কিনলেও এবার ৭-৮ হাজার পিচ কাঁচা চামরা কিনেছি। সাভার এবং হাজারীবাগ দুই জায়গায় দৌঁড়ানোতে এবার ঝুঁকি নিতে চাইনি বলেই কম কিনেছি’।

লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া কেমিক্যাল দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে প্রসেস করার পর লোম, চর্বি, টুকরা মাংস, হাড়, কান, শিং ফেলে দেওয়ার পর সাদা যে অংশ থাকে তাকেই হোয়াইট ব্লু বলে।
 
পরিবেশ দূষণের জন্য এই হোয়াইট ব্লুই ৭০ শতাংশ দায়ী। কারণ, এখান থেকে যে বর্জ্য উৎপাদিত হয় তা পরিবেশের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। সে কারণেই পরিবেশবিদদের দাবি, যতো দ্রুত সম্ভব হাজারীবাগ থেকে সাভারে অন্তত হোয়াইট ব্লু’র কাজ শুরু করা হোক।
 
সিইটিপি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দু’টি মডিউলে ক্রোম রিকভারির কাজ চলছে। হোয়াট ব্লু’র কাজ করার পর চালু হওয়া ৭টি ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে ক্রোম রিকভারির কাজ চলছে। চালু ট্যানারিগুলো থেকে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ ঘনমিটার বর্জ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান সিইটিপি’র প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল কাইয়ুম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের ক্রোম রিকভারির কাজ চলছে। বর্জ্য না পেলে তো সিইটিপি সক্রিয় করা যাবে না। আমরা কি করবো? ট্যানারি মালিকদের চাপ দিয়েও আনতে পারিনি। দেখা যাক, ঈদ গেল, এখন কতোদিনে আসে’।
 
জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ২০০৩ সালে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সাভার ট্যানারি শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের চিন্তা-ভাবনা করে সরকার। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দেখভাল করছে শিল্প মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
 
সাভারের বলিয়াপুরে ২০০ একর জায়গাজুড়ে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে শুধুমাত্র সিইটিপি। ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট একনেকে চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ে।

এ শিল্পনগরীর ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি ট্যানারি কারখানা স্থাপন করা হবে।                   
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৬
এসএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।