রাজশাহীর নকশী কাঁথা বিশ্বে পরিচয় করিয়ে তুলতে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ এ পুরস্কার হাতে তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় এসএমই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (পুরুষ) হিসেবে পুরষ্কৃত হয়েছেন শিন ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম ফকির। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (নারী) হিসেবে ওপাস সাইনের স্বত্বাধিকারী উম্মে হাবিবা নীলা, মাঝারি উদ্যোক্তা (পুরুষ) হিসেবে বিডি ক্রিয়েশনের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন।
পারভীন আক্তারের পৈত্রিক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলায় হলেও ঢাকায় অবস্থান করতেন। ১৯৯৭ সালে ২০ বছর বয়সে বউ হয়ে চলে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ। পাড়ার ননদ, ভাবীরা তাদের সুনিপুন হাতে করা নকশী কাঁথা পারভীনের হাতে দিয়ে বলতেন, ‘তুমি তো ঢাকায় থাকো। হামার ক্যাঁথাটা ঢাকায় লিয়্যা যাইয়োতো, বেচতে পারো কিনা। বেচতে পারলে হামরাকে তখন টাকা দিয়ো। না হইলে ক্যাঁথা ফ্যারত দিলেই হইবে। শুইন্যাছি ঢাকাতে নাকি ক্যাঁথার ভালো দাম পাওয়া যায়। ’
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী ও অন্যরা বলেন, এভাবেই শূন্য থেকে ব্যবসার শুরু পারভীনের। ননদ, ভাবীদের তৈরি করা কাঁথা ঢাকায় এনে পরিচিতদের কাছে বিক্রি করে তাদের টাকা ফেরত দিতেন। তখন স্বল্প পরিসরে ছিলো এ ব্যবসা। গ্রাহক চাহিদা বাড়ায় ২০০৭ সালে নিজে কাপড় ও সুতা কিনে পছন্দের ডিজাইনের নকশী কাঁথা তৈরি শুরু করেন। ধীরে ধীরে এর পরিধি বেড়ে ওঠে।
সুচশিল্পীদের হাতে নকশী কাঁথার কাপড় ও সুতা এবং গ্রাহকের নির্দিষ্ট ডিজাইন দিতেন। কাঁথা তৈরি শেষ হলে পারিশ্রমিক দিয়ে তা ঢাকায় নিয়ে আসতেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত সব আঞ্চলিক এসএমই মেলায় অংশগ্রহণ করেন পারভীন আক্তার। নতুন নতুন গ্রাহক তৈরি হয়। কাঁথার চাহিদা বাড়ে। বাড়ে কর্মীর সংখ্যা। এভাবে বিসিক’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মেলা, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যুব মেলা, অফিসার্স ক্লাবের মেলাসহ দেশের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করেন। যেখানে মেলা সেখানেই রাজশাহী নকশী ঘর। এভাবেই নকশী কাঁথায় বুনি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জাতীয় এসএমই ব্যবসা পরিকল্পনা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্য থেকে নির্মাণ শিল্পের উপাদান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইকোজিপের ইয়াসির আরাফাত ও তার দল। দ্বিতীয় পুরস্কার পান ডায়াবেটিস নির্মূলে সবুজ সমাধান দেওয়া ডায়াহিলের জান্নাতুল নাঈমা ও তার দল। তৃতীয় পুরস্কার পান পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদনের পরিকল্পনাকারী সুরক্ষার দেবজিৎ সাহা ও তার দল।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন কে এম হাবিব উল্লাহর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-নারী ও শিশু প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫,২০১৭/আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা
এমএন/জেডএস