অথচ সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী এমন এক কার্যকর পন্থা যা তামাক ব্যবহারের সময় প্রতিবারই ব্যবহারকারীকে তামাকের ক্ষতি সম্পর্কিত বার্তা দিয়ে থাকে। আর মোট জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশ লেখা-পড়া না জানায় বাংলাদেশের জন্য এমন বার্তার গুরুত্ব অপরিসীম।
গত নভেম্বরে প্রকাশিত কানাডিয়ান ক্যান্সার সোসাইটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখানো হলেও আইনের বাস্তবায়ন মোটেই সন্তোষজনক নয়।
গবেষণা ও এডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়িতে ১০০ শতাংশ, জর্দায় ৯৬.৪ শতাংশ, গুল -এ ৭৫.৮৬ শতাংশ ও সিগারেটে ২০.৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই শতভাগ আইন মেনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯.২ শতাংশ তামাকপণ্যের প্যাকেটে কোনো সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীই নেই। আর অধিকাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত শতভাগ কমপ্লায়েন্স অনুসরণ না করেই তামাকপণ্য বিক্রি করছে।
গবেষণায় ৪৪টি ব্র্যান্ডের সিগারেটের মধ্যে ৩৫টি এবং ১৭টি ব্র্যান্ডের বিড়ির মধ্যে ১২টি ব্র্যান্ডের প্যাকেট পূর্ববর্তী পর্বের ছবিসহ বাজারে পাওয়া গেছে। বিড়ির প্যাকেটে ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত’ বিবৃতি মুদ্রণ হার শূন্য শতাংশ।
ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ক্ষেত্রেও আইন প্রতিপালনের হার খুবই উদ্বেগজনক। ৪০.২ শতাংশ জর্দা কৌটায় এবং ২৩.৭ শতাংশ গুল কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি। আর প্যাকেট বা কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর অবস্থান বিষয়ক চিত্র তো খুবই ভয়াবহ। ৯১.৭ শতাংশ বিড়ির প্যাকেট, ৮৫.২ শতাংশ জর্দা ও ৪২ শতাংশ গুল কৌটায় সতর্কবাণী সঠিক স্থানে মুদ্রণ করা হয়নি।
গবেষণার আরো দেখা গেছে, তামাকপণ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক বিষয়টি সম্পর্কে ৩১ শতাংশ বিক্রেতাই অবগত নন। ৭০.৮ শতাংশ বিক্রেতাই জানেন না ৩ মাস অন্তর সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পরিবর্তন বিষয়ক আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
স্বল্পদামি সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল যেগুলো মূলত নিরক্ষর ও নিম্নআয়ের মানুষ বেশি ব্যবহার করেন সেগুলোর ক্ষেত্রে আইন প্রতিপালনের হার আরো হতাশাজনক।
তাই শক্তিশালী সরকারি নজরদারির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার এই কার্যকর হাতিয়ার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে তা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তাই তামাক কোম্পানিগুলোকে প্যাকেট বা কৌটার অন্যূন ৫০ ভাগ স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণে বাধ্য করা, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী আইনসম্মত উপায়ে মুদ্রণ নিশ্চিত করা, আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীবিহীন এবং আইন লঙ্ঘনকারী তামাকপণ্য ধ্বংস করে বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, মোবাইল কোর্ট এর সংখ্যা বাড়িয়ে আইন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি কার্যকর করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে তামাকপণ্য বিক্রেতাদের সচেতন করার দাবি জানিয়ে প্রজ্ঞা।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশে সব তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উপরিভাগের ৫০ শতাংশ জায়গাজুড়ে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কিত রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বাধ্যতামূলক করা হয়। এরপর বছর পেরুলেও সার্বিকভাবে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের চিত্র হতাশাজনক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
জেডএম/