মূলত মিলার সিন্ডিকেট চাল মজুদ করে ঠাণ্ডা মাথায় বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করছেন। চালের সরবরাহ কম থাকার অযুহাতে সুযোগ নিচ্ছেন আড়তদাররাও।
দাম বাড়ানোর পেছনে মিলার সিন্ডিকেট বাজারে ধান সঙ্কটের ধুয়া তুললেও মজুদ গড়ে চালবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন চাল নিয়ে। তাই আগামীতে চালের বাজার আরো অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বোরো মৌসুমের ধান-চাল ঘরে ওঠা না পর্যন্ত চালের বাজারে চড়া ভাবই থাকতে পারে।
চালের দামের উর্ধ্বগতিতে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ পড়েছেন বিপাকে। তারা সামনের মৌসুমের নতুন ধান বাজারে আসার অপেক্ষায় দিন গুণছেন।
ময়মনসিংহ নগরীর হিজবুল্লাহ সড়কের পাইকারী চালের বাজারের আড়তদাররা বাংলানিউজকে বলেন, বোরো ধান ঘরে ওঠার আগের এ সময়টাতে প্রতি বছরই হুট করে চালের দাম বেড়ে যায়। এ সময়ে বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকায় ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মৌসুমের শুরুতেই মিলাররা লাখ লাখ টাকা নিয়ে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েন। সাধারণত কৃষকরা নিজেদের খাবারের চাল রেখে বাকিটুকু বিক্রি করে দেন মিলারদের কাছে। আর মিলাররা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে চালের বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হাতিয়ে নেন বাড়তি মুনাফা।
সপ্তাহখানেক আগেও নতুন নাজিরশাল চাল যেখানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হতো ২ হাজার টাকায়, এখন সেটিই বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৩শ’ টাকা। পুরাতন বিআর-২৮’র দামও বেড়েছে বস্তাপ্রতি ১শ’ থেকে দেড়শ’ টাকা।
একইভাবে ১ হাজার ৯৫০ টাকা বস্তার পুরাতন বিআর ২ হাজার ২শ’ টাকা, ১ হাজার ৮শ’ টাকার দেশি স্বর্ণার বস্তা ১শ’ টাকা বেশী দামে কিনতে হচ্ছে।
স্থানীয় আড়তদার মেসার্স নির্মল ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী নির্মল পাল (৫০) বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ধান সঙ্কটের কারণেই চালের দাম বেড়েছে। বৈশাখ মাসে বাজার ঠিক হয়ে যাবে।
এ সময় তার দোকানের এক কর্মচারী বলেন, বৈশাখে প্রতি বস্তায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা দাম কমবে।
সিন্ডিকেটের অভিযোগ স্বীকার করে স্থানীয় মেসার্স বিমল ট্রেডার্সের কর্মচারী কমল পাল বলেন, মিলাররা এখনই ধান ছাড়ছেন না। কারণ তারা জানেন, ক’দিন পর দাম আরো চড়া হবে।
এদিকে চালের আড়তের দামের এ প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। চাল কিনতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদেরও এখন তাই হাঁসফাঁস অবস্থা। কেজি প্রতি তাদের ৫ থেকে ৬ টাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে।
তবে দাম বাড়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে আজাদ রহমান নামে স্থানীয় শ্যামগঞ্জ বাজার এলাকার এক মিলার বাংলানিউজকে বলেন, ধান থেকে চাল তৈরি করতে বস্তায় প্রায় একশ’ টাকা লোকসান দিতে হয় মিল মালিকদের। এ সময়টাতে ধানের মজুদও থাকে কম। এছাড়া পরিবহন ব্যয়, শ্রমিক খরচাসহ সব মিলিয়ে চালের দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
জেডএম/