ট্যানারিগুলোতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবি জানান তারা।
ট্যানারি শিল্পের শ্রমিক ও মালিকদের এ অবরোধ ও মানববন্ধন শনিবার (০১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা বারটা পর্যন্ত চলে।
ঝিগাতলা-শংকর সড়ক অবরোধ করে চলা মানববন্ধনের সমাবেশে হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা দাবি করে বলেন, ‘বিসিকের গাফিলতিতে এখনো সাভারের চামড়া শিল্প পার্ক উৎপাদনে সক্ষম হয়নি, সিইটিপি নির্মিত হয়নি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ ০৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগে আমাদের কারখানা বন্ধ (ক্লোজ ডাউন) ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। যদি ০৬ এপ্রিলের মধ্যে সাভারে আমাদের ইউটিলিটি সুবিধা না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো’।
ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ সমাবেশে বলেন, ‘বিসিক চামড়া শিল্পনগরী তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো আমাদের ৩০ হাজার শ্রমিকের থাকার ব্যবস্থা করেনি, গ্যাস-বিদ্যুৎ নেই। আমরা যাবো কি করে? আমাদের আর জুজুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। বিসিক নিজেরা চামড়া শিল্প পার্ক পুরোপুরি তৈরি না করে আদালতে বলেছে, তাদের কাজ নাকি শেষ। বিসিকের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি’।
লেদার গুডস্ অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, ‘নগরীতে যে পরিমাণ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তার মাত্র ৪ শতাংশের দায় আমাদের। কিন্তু আমাদের ওপরই খড়্গ চালানো হচ্ছে, ষড়যন্ত্র চলছে। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে লাখ লাখ লোক বেকার হবেন। বিসিক যদি চামড়া শিল্প পার্ক পুরোপুরি তৈরি করতে পারতো, তাহলে আমরা চলে যাবো। তারা তাদের কাজ করেনি। বিসিকের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে হবে’।
ট্যানারি মালিক শ্রমিকদের অনির্ধারিত এ অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর না করায় সর্বোচ্চ আদালত আগামী বৃহস্পতিবারের (০৬ এপ্রিল) মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সম্পূর্ণ বন্ধের (ক্লোজ ডাউন) নির্দেশ দিয়েছেন মালিকদের। গত মাস থেকে হাইকোর্টের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে কারখানাগুলোর বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগও।
সর্বশেষ আগামী ঈদ-উল আযহা পর্যন্ত হাজারীবাগে থাকতে চেয়ে ট্যানারি মালিকদের করা আবেদনও খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
ফলে হাজারীবাগে কোনোভাবেই আর থাকার সুযোগ নেই ট্যানারিগুলোর।
এর আগে গত কয়েক বছরে সাভারে গড়ে ওঠা চামড়া শিল্পনগরীতে হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানা স্থানান্তরে সরকারের দফায় দফায় দেওয়া নির্দেশেও কান দেননি ব্যবসায়ীরা।
২০১০ সালের অক্টোবরে ট্যানারি স্থানান্তরে ছয়মাস সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে হাজারীবাগে ট্যানারি চালানোর অনুমোদন নেই। এরপরও সরকার গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলেও ট্যানারি সরিয়ে নেননি মালিকরা।
মানববন্ধনে ট্যানারি মালিকদের ‘দাবি’ মেনে না নেওয়া হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাজারীবাগের সকল ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী ইলিয়াসুর রহমান বাবলুও।
বাবলু বলেন, ‘সাভারের চামড়া শিল্পপার্ক এখনো সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। তারপরও আমরা ট্যানারি সরিয়ে নিতে মাত্র তিনমাস সময় চেয়েছি। সামনে ঈদ, এখন কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বো। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়া হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭
ইউএম/এমআইএইচ/এমজেএফ/এএসআর
** সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন ট্যানারি শ্রমিক-মালিকরা
** ট্যানারি শ্রমিক-মালিকদের সড়ক অবরোধ