১৩৫/এ গলি ধরে এগিয়ে যেতেই সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পাহারাদার বললেন, আজ সবাই আন্দোলনে। কয়েক দিনের মধ্যে লাইন কেটে দেবে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে হাজারীবাগের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ট্যানারিগুলোর গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কথা। এর প্রতিবাদে শনিবার (০১ এপ্রিল) সকালে ধানমন্ডির জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন-সমাবেশ করছিলেন মালিক-শ্রমিকেরা। সেখানে দুই ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে অংশ নেন কয়েক হাজার শ্রমিক-মালিক-কর্মচারী।
এই আন্দোলনের মধ্যেও হাজারীবাগে ‘এম/এস. একে লেদার কমপ্লেক্স’র মেশিনের চাকা ঘুরছে। তিন তলায় উঠে ম্যানেজারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দিলেন পাহারাদার।
ডেটলাইন ৬ এপ্রিল, এ নিয়ে কী ভাবছেন- প্রশ্নে হাজারো অনিশ্চয়তা নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন জেনারেল ম্যানেজার খোরশেদ আলম।
“গ্যাস-বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, আমাদেরই ১০ লাখ ডলার লস হবে। কারখানা বন্ধ হলে ব্যাংক লোন থেকে যে ইন্টারেস্ট আসবে সেখানেও ক্ষতি হবে”, বলেন খোরশেদ।
কয়েক মাস আগের বিদেশি অর্ডারগুলো নিয়ে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন প্রত্যেক কারখানার হাতে দেশি-বিদেশি অর্ডার। কন্টাকগুলো বাতিল হয়ে যাবে।
“প্রত্যেক কোম্পানিকে মাসে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত গচ্ছা দিতে হবে। ”
উচ্চ আদালতের একের পর নির্দেশনায় সাভারে ট্যানারি পল্লীতে চামড়ার প্রাথমিক কাজ শুরু করলেও পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ এবং রাস্তাঘাট চালু না হওয়ায়।
ম্যানেজার খোরশেদ বললেন, এখানে ওয়েট ব্লু (প্রাথমিক কাজ) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাভারে চলছে। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় চূড়ান্ত কাজগুলো এখানেই করতে বাধ্য হচ্ছি।
আলাপচারিতা শেষে কারখানা থেকে নেমে আসেতে দেখা হয় এই কারখানার মালিক নুরুল আমিনের সাথে।
সবেমাত্র আন্দোলন থেকে এসেছেন কারখানার কাছে। ঘর্মাক্ত শরীরে অনিশ্চয়তা নিয়ে কথা বলছেন পাশের কারখানার মালিক-শ্রমিকদের সাথে।
পরিচয় পেয়ে বললেন, আদালতের আদেশ মানি। কিন্তু মেশিনারিজগুলো এখান থেকে সাভারে নিয়ে গিয়ে ফিটিং করতেও ২-৩ মাস সময় লাগবে।
“ওখানে গ্যাস কানেকশন নাই, রাস্তাঘাট নাই। চলবো কীভাবে?”
ইউটিলিটি সার্ভিস বন্ধ করে দিলে কী হবে- বন্ধ হয়ে যাবে, সব বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের ১২টা বাজবে। কোটি কোটি টাকার অর্ডার থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। আমার এখানে সাড়ে ছয় লাখ স্কয়ার ফুট লেদারের অর্ডার আছে। এগুলো বাতিল হয়ে যাবে।
কারখানা বন্ধ হলে মালিকদের পাশাপাশি প্রায় লক্ষাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে বলে জানান নুরুল আমিন।
ডাই, সেটিং, ভ্যাকুয়াম, টানাল, টগল, প্লেট, মেজারমেন্ট, ফেনিশিং- এ মেশিনগুলো গ্যাস সংযোগ ছাড়া চলে না। মূলত এসবের কাজগুলো বর্তমানে চলছে হাজারীবাগের কারখানায়।
হাজারীবাগের তালিকাভুক্ত ১৫৬টি ট্যানারির বেশিরভাগই সাভারে তাদের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। কিন্তু গ্যাস সংযোগ না থাকায় স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। এজন্য বিসিককে দুষছেন মালিক-শ্রমিকেরা।
হাজারীবাগে ৬ এপ্রিলের মধ্যে ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং সাভারের পল্লীতে ইউটিলিটি না পাওয়া- এই দুই সঙ্কটে এখন মালিক-শ্রমিকরা আছেন হাজারো অনিশ্চয়তার মুখে।
এ অবস্থায় রোববার (০২ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী করণীয় জানাবে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। শনিবারের সমাবেশ থেকে ট্যানারি বন্ধ করে চামড়া রফতানি বন্ধের হুমকিও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ