সোমবার (৩ এপ্রিল) সকাল ৯টায় জেলা শহরের বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় অবস্থিত কারখানাটি পরিদর্শন করেন ওই কমিটির সদস্যরা।
কারখানাটি চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটির ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ সময় দ্বিতল ভবনে রক্ষিত যন্ত্রপাতি কারখানা চালুর বিষয়ে উপযোগী কি না তা ঘুরে দেখেন কমিটির সদস্যরা।
পরিদর্শন টিমে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল খায়ের, উপ-প্রধান (পরিকল্পনা) বেগম তানিয়া খানম, রাজশাহী রেশম বোর্ডের মহা পরিচালক আনিস উল হক ভুইয়া, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মকর্তা সেরাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ১৫ বছর আগে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের চাষিরা তুঁত গাছ লাগাতেন। তাদের প্রায় অর্ধশত বাগান ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো প্রায় ১৫-২০টির মতো বাগান টিকে রয়েছে। যেসব বাগান থেকে গুটি পোকা পালনের মাধ্যমে সুতা উৎপাদন করেন রেশম কর্মীরা।
এক সময় ঠাকুরগাঁও ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানায় উৎপাদিত হতো মসৃণ সিল্ক কাপড়। অথচ নীতি-নির্ধারকদের টানাপোড়েন ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর উদাসীনতায় দিনে দিনে এই কারখানাটি লোকসানে পড়ে। বিএমআরই করা হবে এমন কথা বলে হঠাৎ করে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ কারখানা চালু করার কথা বলে একাধিকবার রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ঘোষণা পেলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ হওয়ার পর প্রায় পাঁচ হাজার রেশম চাষি বেকার হয়ে পড়েন। তবে এখনো প্রায় দুই হাজার চাষি রেশম চাষ ধরে রেখেছেন। কিন্তু তুঁতগাছের অভাবে তারা গুটি পোকা পালন করতে পারছেন না। তা ছাড়া পুঁজি ও উপকরণের অভাবে তারা এখন বিপাকে পড়েছেন। পাঁচ হাজার চাষি বেকার হয়ে পড়ায় তারা ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। অন্যদিকে অব্যবহৃত থাকায় রেশম কারখানার ৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। অথচ কারখানাটি চালু হলে রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত পাঁচ হাজার চাষির আবার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
১৯৭৭-৭৮ সালে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস ঠাকুরগাঁওয়ে এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। ১৯৯৫ সালে রেশম কারখানাটি আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে। আধুনিকীকরণে মোট ব্যয় হয় এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা। লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বরে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
চাষি ও স্থানীয় জনগণের মতে, মিলটি ঐতিহ্যগত কারণে চালু করা দরকার। চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাছাড়া এখানকার কাপড় অত্যন্ত মূল্যবান। কাঁচামালের কোনো অভাব হবে না।
বাংলাদেশ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা রেশন কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। মন্ত্রণালয় ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় নির্দেশ দিয়েছে। আশা রাখি খুব শিগগিরই কারখানাটি চালু হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, রেশম কারখানাটি ইতোমধ্যে সার্কের একটি প্রতিনিধি দল ও মন্ত্রণালয়ের ১১ সদস্যের টিম পরিদর্শন করেছে। কারখানাটি চালুর লক্ষ্যে সরকার খুবই আন্তরিক। এটি চালু হলে দেশের সর্বোচ্চ মানের কাপড় তৈরি হবে ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ০৩ এপ্রিল, ২০১৭
আরএ