‘দিন এনে দিন খাওয়া’ ফেনী অঞ্চলের ৭৭ জন গ্রাহক তাদের মেয়ের বিয়ে ও ঋণ পরিশোধসহ অন্যান্য কাজে ১০ বছর মেয়াদী সঞ্চয়ী হিসেবে টাকা রাখেন। তাদের অভিযোগ, কষ্টে উপার্জিত জমানো এ অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চালাচ্ছে বায়রা ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ।
গত ২১ মার্চ বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের কাছে এ অভিযোগ করেন তারা।
এর আগে খুলনা, বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিম এবং কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার গ্রাহক বিমা দাবি পরিশোধে গড়িমসির অভিযোগ আনেন কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
ফেনীর বাসিন্দা নূরুল আলম ভুঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, বায়রা ডিভিশনের ক্ষুদ্র বিমায় (পলিসি নং-৪০৩-০০০০৭) ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন তিনি। নির্বাহী রশিদে তার টাকার পরিমাণ ৬০ হাজার ৯৮০ টাকা রাখা হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণের দিন ছিল ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর।
তার অভিযোগ, ‘অনেক কষ্টে বিবাহযোগ্য মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা সঞ্চয় করেছি। কিন্তু আজ ওই টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না’।
৭৭ জন গ্রাহকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আমরা ফেনী এলাকার বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহক। ২০০৫ ও ২০০৬ সালের বিভিন্ন সময়ে বায়রা ডিভিশনের ক্ষুদ্র বিমা প্রকল্পে বিমা করি। দীর্ঘ ১০ বছর নিয়মিত প্রিমিয়াম দেওয়ার পর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের বিভিন্ন সময়ে বিমাগুলোর মেয়াদ পূর্তি হয়’।
‘মেয়াদ পূর্তির দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও আমাদের বিমা দাবির চেক পাইনি। বরং পাওনা টাকার জন্য গেলে কোম্পানি আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। চেকের জন্য স্থানীয় অফিসে গেলে অফিসের লোকজন বিভিন্নভাবে টালবাহানা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন’।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘তাছাড়াও কোম্পানির ইস্যুকৃত নির্বাহী রশিদে উল্লেখিত টাকার পরিমাণ আমাদের জমাকৃত টাকার চেয়েও অনেক কম। এ বিষয়ে অফিসে গিয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্মরত লোকজন বলছেন, কম্পিউটারের এন্ট্রিতে যা আছে, তাই দেওয়া হবে’।
‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষগুলো অতি কষ্টে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থ জমা করে ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকা সঞ্চয় করেছি। সঞ্চয়ের অর্থ দিয়ে কেউ বিবাহযোগ্য মেয়ের বিয়ে দেবো, কেউ ঋণ পরিশোধ করবো, কেউ বা অন্য কাজে লাগাবো। কিন্তু আজ আমরা ওই টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না’।
‘এমতাবস্থায় কোম্পানির অভিভাবক হিসেবে আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আপনি আমাদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আমাদের সঞ্চয়কৃত টাকাগুলো তথা চেক প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করবেন’।
৭৭ জনের পক্ষে চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেন মহি উদ্দিন (পলিসি নং-৪০৬-০০১৫৫), হারুন অর রশিদ (পলিসি নং-৪০৬-০০০১২), শ্যামেলেন্দু শর্মা (পলিসি নং- ৪০৬-১৫৬) এবং মানিক চন্দ্র দে (পলিসি নং-৪০৬-১৮৬)।
নাম না প্রকাশের শর্তে আইডিআরএ’র একজন সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান আবুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার জানা মতে, ফেনী এলাকার কোনো গ্রাহকের বিমার টাকা বাকি নেই। যদি কেউ পলিসি করে টাকা না পেয়ে থাকেন, তবে আমার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে এলে টাকা দিয়ে দেবো’।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৭
এমএফআই/এএসআর