অর্থ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের কয়েকটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম’ প্রকল্পের আওতায় ধলেশ্বরী-পুংলি-বনসাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা খনন কাজ চলছে।
আর ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে কেন্দ্রটি স্থাপনসহ সেখানকার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির। এতে ভারতীয় ঋণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ডলার ঋণ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়াবে প্রায় ৭ হাজার ৫২০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারতের ঋণে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের প্রকল্প জমা দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি)। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ২১টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়।
তৃতীয় দফা ঋণ সহায়তার আওতায় নমনীয় ঋণ (এলওসি) হিসেবে এই ২১ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে আরও ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন বা ৩৬১ কোটি ডলার । প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১ নম্বরে বুড়িগঙ্গা এবং ১৩ নম্বরে রাখা হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে।
বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম
বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি প্রথম দফায় ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হয়, ৯৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের প্রকৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি।
সেজন্য আরও বড় আকারে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এবার এই প্রকল্প বিস্তৃত আকারে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।
জানা যায়, প্রকল্পটি আরও বড় আকারে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ২ আগস্ট পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে অতিরিক্ত টাকা চেয়ে পরিকল্পনা বিভাগ বরাবর ডিও লেটার (আধা-সরকারিপত্র) পাঠায়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক-উল-ইসলাম বরাবর ওই লেটার পাঠান।
সেখানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যথাযথ অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে নদীর মরফোলজি (আকার-প্রকৃতি) পরিবর্তন হওয়ায় যমুনাতে প্রায় এক কিলোমিটার চর সৃষ্টি হয়েছে। অত্যধিক পলির কারণে প্রকল্পের টাঙ্গাইল অংশে আগের বছর যা খনন করা হয়, পরবর্তী বছরে ভরাট হয়ে যায়। এ কারণে নিউ ধলেশ্বরী থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভাটি পর্যন্ত এলাকায় পলি ভরাট হয়েছে মাত্রাতিরিক্তি। প্রকল্পের অগমেন্টেশন রুটে (এলাকার আকার) বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার প্রায় ২২টি সেতু থাকায় নদী খননের ফলে এসব সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এছাড়া ড্রেজিংকৃত অংশ পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য অধিক বরাদ্দ দরকার।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, প্রথম মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর নিউ ধলেশ্বরীর উৎসমুখে নানা অবকাঠামো অপসারণসহ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) করা হয়। সেই স্টাডির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই প্রকল্পটি বৃহৎ আকারে বাস্তবায়নের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে যমুনা থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ৩০০ কিউসেক পানি আনা যাবে।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন-১) শামিম আরা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের তৃতীয় দফা ঋণ সহায়তার আওতায় আমাদের কোনো প্রকল্প নেই। তবে চলমান ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম’ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক টাকা প্রয়োজন। কোন দেশের টাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তবে ইআরডির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে বলেছে, ভারতীয় ঋণেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
পাবনার রূপপুরে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প রাশিয়ার সহযোগিতায় শুরু হলেও এবার এতে যুক্ত হচ্ছে ভারতও। ১ হাজার ৬২ একর জায়গার ওপর বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে ভারতের কাছ থেকে ৭ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ পর্ব পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর এখন চলছে দেওয়াল নির্মাণসহ বাকি অবকাঠামোগত কাজ। মাটি ভরাটের কাজও শেষ পর্যায়ে।
এবার শুরু হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে মূল প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কেন্দ্রটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ৫০ অর্থবছর। এই সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দু’টি ইউনিটে প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। বিদ্যুৎ খরচা পড়বে ইউনিটপ্রতি মাত্র ৩ টাকা। ২০১৭ সালেই প্রকল্পের মূল প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা। প্রথম ইউনিটে ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটে ২০২৪ সালের অক্টোবরে উৎপাদনের সময়সীমা ধরা হয়েছে।
সূত্রমতে, দু’টি ইউনিটসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজে ব্যয় হবে ৯১ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভারতের ৭ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৭
এমআইএস/এইচএ