রাজধানীর কাওরানবাজারে গিয়ে দেখা যায়, আমদানি করা বার্মিজ ইলিশেই সয়লাব পুরো কাওরানবাজার। এক কেজির একটু বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি এপ্রিলের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা কাস্টমস হাউসে ৩৭টি ইলিশের চালান এসেছে। যার মধ্যে এসসি ট্রেডার্স ১৭টি, এওয়ান করপোরেশন ১০টি, ব্রাইট কোল্ড স্টোরেজ ৭টি, এশিয়া মেরিন প্রোডাক্ট ৩টি চালান এনেছে।
৩৭টি চালানে আনা ইলিশের ওজন ৫২ হাজার ৯শ’ ৪০ কেজি। এছাড়া আমদানিকারকদের ঘোষণা অনুযায়ী এগুলোর মূল্য ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৬ টাকা। যার অর্থ হলো মিয়ানমার থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি ইলিশের দাম মাত্র ৯৮ টাকা। আর ৪১ লাখ ২৪ হাজার ৫২১ টাকা শুল্ককর পরিশোধ হয়ে প্রতি কেজি ইলিশের দাম দাঁড়ায় মাত্র ১৭৬ টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে চলতি মাসের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ২৫টি ইলিশের চালান এসেছে। যেখানে ব্রাইট কোল্ড স্টোরেজ ৩টি, মেজোর এগ্রো প্রোডাক্ট ৩টি, মামুন ট্রেডার্স ৫টি, রূপা এন্টার প্রাইজ ১টি, তাইহান ফুডস ২টি, রূপালী ট্রেডিং লিঃ ৩টি চালান এনেছে। বাকি ৮টি কোম্পানি ১টি করে ইলিশের চালান এনেছে।
২৫টি চালানে আনা ইলিশের ওজন ৭ লাখ ৭৭ হাজার ১৭০ কেজি। আমদানিকারকদের ঘোষণা অনুযায়ী এগুলোর দাম ৮ কোটি ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৮টাকা। ফলে বিদেশ থেকে আনা প্রতি কেজি ইলিশের দাম দাঁড়ায় ১০৭ টাকা। আর শুল্ককরাদি ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৯৯ টাকা পরিশোধ করে প্রতি কেজি ইলিশের দাম দাঁড়ায় ১৬৯ টাকা।
এছাড়া টেকনাফ দিয়ে চলতি মাসের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যস্ত এসেছে ৯টি ইলিশের চালান। যার মধ্যে জাফর এন্টার প্রাইজ ৪টি চালান এনেছে। যেগুলোর ওজন ৮ হাজার ৭শ’ কেজি।
আর ৯টি চালানে আনা ইলিশের ওজন ৫১ হাজার ৮শ’ কেজি। আমদানিকারকদের ঘোষণা অনুযায়ী এগুলোর দাম ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৮১ টাকা। তার মানে প্রতি কেজি ইলিশের দাম পড়ছে ১শ’ টাকা। শুল্ককর ৪৫ লাখ ৯১ হাজার ২৯ টাকা যোগ হয়ে দাম দাঁড়াচ্ছে ১৮৮ টাকা।
এনবিআর সূত্রমতে, বিদেশ থেকে ইলিশ আমদানির ক্ষেত্রে ৮৯.৪২ শতাংশ শুল্ককরাদি পরিশোধ করতে হয়।
ফলে বিদেশ থেকে ইলিশ আমদানির পর শুল্ককরাদি পরিশোধ করার পর ইলিশের দাম কেজি প্রতি ২শ’ টাকার নিচেই থাকছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে পরিবহন ব্যয়। কিন্তু রাজধানীসহ দেশের বাজারে কেজি প্রতি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে হাজার/বারোশ’ টাকারও বেশি দরে। ফলে এক ইলিশেই হাজার টাকা লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা।
ইলিশের দাম বাড়ার বিষয়ে এসসি ট্রেডার্সের কর্মকর্তা করীম বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশ শুধু আমদানি নয়, এর সঙ্গে আরো অনেক খরচ রয়েছে। তাই বলে হাজার টাকা করে কি ইলিশের খরচ পড়ছে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। তারপর এই কর্মকর্তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ইলিশের দাম বাড়ায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না জানতে মহাপরিচালক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি জানান, ইলিশের দাম বাড়া কিংবা কমা নিয়ে তাদের কিছু করার নেই। এটা দেখবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর বাজার মনিটরিংয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনাও দেয়া হয়নি। সুতরাং তাদের কিছু করার নেই।
বিদেশ থেকে ইলিশ আমদানির বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ( এনবিআর) মো.নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশ থেকে ইলিশ আমদানি করতে হলে ৮৯ শতাংশের বেশি শুল্ককরাদি দিতে হয়। যথারীতি ব্যবসায়ীরাও দিচ্ছেন। শুল্ক করাদি ছাড়া কোনো ইলিশ খালাস হয় না। ফলে এনবিআর’র নির্দেশনা অনুযায়ী কাস্টমস হাউসগুলো শুল্ককরাদি আদায় করছে।
ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে মৎস্য মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩,২০১৭
এসজে/জেডএম