শামুক-ঝিনুকের খোলসের সহজলভ্যতায় তাই হালে অনেক চুন কারখানা গড়ে উঠেছে যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি ঘেরগুলোর ওপর নির্ভর করে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশী দামে খোলস কিনে চুনিয়াদের যখন নাভি:শ্বাস উঠছে তখন এসব এলাকার চুন ব্যবাসায়ীরা দেখছেন লাভের মুখ।
এমনই একজন চুন ব্যবসায়ী যশোর-খুলনা মহাসড়কের ধারে অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগের শহিদুল ইসলাম। বংশগতভাবে চুনিয়া সম্প্রদায়ের না হলেও বছর দশেক আগে নিজ বাড়ির পাশের উন্মুক্ত স্থানে খোলস পুড়িয়ে সাদা চুন তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। চাহিদা থাকায় চুন বেচে বাড়তে থাকে মুনাফা। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন এক বিরাট কারখানা।
শহিদুল ইসলামের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে একই এলাকায় আরও তিনটি, সদর উপজেলার বসুন্দিয়ায় দুইটি এবং মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুরে দুইটি কারখানা মিলে ছয়টি চুন কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানা বছরের প্রায় ৯ মাস সচল থাকে।
যেখানে শ্রম দিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছে এলাকার আরো শতাধিক নারী-পুরুষের।
অভয়নগরের প্রেমবাগ এলাকার চুন কারখানার মালিক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ঘেরগুলোতে মাছের খাবার হিসেবে প্রচুর শামুক-ঝিনুকের মাংস ব্যবহার করা হয়। পরে শামুক-ঝিনুকের খোলস পড়ে থাকে। এই খোলস প্রতি বস্তা (৩০ থেকে ৩৫ কোজি) ২০০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা দরে সংগ্রহ করি। পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তা পুড়িয়ে চুন তৈরি করা হয়।
একই গ্রামের হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ৫০ কেজি শুকনা চুন তৈরি করতে সাড়ে পাঁচ মণ শামুক পোড়াতে হয়। আমার কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ২০ মণের মতো তরল চুন তৈরি হয়। এজন্য প্রথমে শামুক-ঝিনুকের খোলস সংগ্রহ করে পানিতে পরিষ্কার করা হয়। পরে শুকিয়ে চুল্লিতে স্তরে স্তরে সাজিয়ে কাঠ দিয়ে পুড়িয়ে চুন তৈরি করা হয়।
ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট, খুলনার ফুলতলা, বেজেরডাঙ্গা ও যশোরের ভবদহ এলাকা থেকে শামুক-ঝিনুকের খোলস সংগ্রহ করেন। এই অঞ্চলের ছয়টি কারখানায় প্রতিদিন গড়ে শতাধিক মণ চুন তৈরি হয়। তবে খোলসের অভাবে বছরের ১২ মাসের মধ্যে তিন মাস কারখানা বন্ধ থাকে।
সব মিলিয়ে বছরে এই অঞ্চলের কারখানাগুলোতে ২৭ হাজার মণ চুন তৈরি হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। এছাড়া কারখানায় তৈরি শুকনা চুন পানিতে ভিজিয়ে ছাকুনির মাধ্যমে তৈরি করা হয় তরল চুন। বাজারে এ চুনের বেশ চাহিদা রয়েছে।
শহিদুল ইসলাম জানান, তৈরি চুন তারা খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ঝালকাঠি, ভোলাসহ সারা দেশে বিক্রি করেন। তরল চুন প্রতি বস্তা (৩০ থেকে ৩৫ কেজি) ২৫০ টাকা এবং শুকনা চুন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৯শ’ থেকে হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এসব চুন ব্যবহার করে মাছ চাষের জন্য ঘের ও পুকুর প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া পাকা ঘরের দেওয়াল চুন-কাম করা হয়। পানের সাথেও খাওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭
ইউজি/জেডএম