বুধবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর স্থায়ী এ পশুর হাটে জমে উঠেছে কোরবানির পশু বেচা-কেনা। মাঝারিগুলোর চাহিদা বাড়ায় ৭৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা দামের গরু বিক্রিও বেশি।
আড়াই মণ মাংস পাওয়া যাবে- এমন একটি দেশি গরু ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি করে মহাখুশি মানিকগঞ্জের রশিদ ব্যাপারী। গরুটিতে ১০ হাজার টাকা লাভ করেছেন বলে জানান তিনি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রচুর আমদানি হলেও অন্য হাটের তুলনায় এখানে গরুর দাম চড়া। বিশেষ করে মাঝারি আকারের গরুপ্রতি দাম গতবারের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি।
অন্যদিকে ব্যাপারীদের দাবি, গত বছর ৪০০ টাকা কেজি থাকলেও এবার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। ফলে একটি ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম এমনিতেই ১০ হাজার টাকা বেশি হয়। গোখাদ্যের দামও বেড়ে যাওয়ায় বাজার চড়া হওয়াই স্বাভাবিক।
মিরপুর-১২ নম্বর থেকে গরু কিনতে আসা ব্যবসায়ী হাজী আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘পত্রিকায় দেখেছি, বন্যার কারণে গরুর দাম কম। কিন্তু হাটে এসে দেখি, অনেক বেশি। গতবারের ৮০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা দামের গরু এবার এক লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা চাচ্ছেন বিক্রেতারা’।
চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাট থেকে ২০টি মাঝারি গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী সেতাবুর রহমানের গত চারদিন তেমন বেচা-কেনা ছিলো না। বুধবার তিনটি গরু লাভে বিক্রি করেছেন তিনি।
সেতাব বাংলানিউজকে বলেন, ‘বুধবার হাটে গাহাক (ক্রেতা) এসেছে। ছোট গরু ভালোই লিচে। আগে গাহাকেরা গরু ফ্রি লিয়ার (সস্তায়) ধান্দায় ছিলো। আজকে গাহাকে গরু ভালোই টানছে’।
সিরাজগঞ্জের কুতুব উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, ‘ক্রেতারা গরু মাংনা (স্বস্তায়) পাইলে ভালো। কিন্তু বেটারা (বেপারি) যে কোন বিপদে আছে, সেটা তো কেউ দ্যাখে না। আমার দ্যাশ সিরাজগঞ্জ তলাই গ্যাছে। পুরো ডুবা অ্যালাকা হইয়া গ্যাচে। অপদার বাজারে গরু রাখছি। নিজের সাওয়ালরে সাইডে থুইচি, গরুকে টানে (শুকনা স্থান) রাখছি। মাচায় বাইনদে সাওয়াল থুইছি, কিন্তু টান কনে আছে, সেকানে গরু রাখছি। তাছাড়া এয়াক (গরু) পানি খাড়া কইরা থুয়া (রাখা) যাবে না। এতো কষ্টের বিনিময়ে গরু আইনা আমরা ফল পাইতেছি না’।
‘একটা গরু সত্তুর (৭০) হাজার ট্যাকায় কিনছি। আর এর পাছে ৪০ হাজার ট্যাকা খরচ আছে। এক লাখ ১০ হাজার ট্যাকা পড়ছে। আইসে দাম কইতেছে ৬০ হাজার ট্যাকা। তাইলে আমি কানমু না হাসমু? এইযে সারা বচ্চর (বছর) অ্যাকে (গরু) লালন-পালন করছি, তাইলে আমাগের কি লাভ?’
তিনি বলেন, ‘গরুর দাম গতবারের থেকে বাড়তি। ৪০০ ট্যাকা গোস আছিল, হইয়ে ৫০০ ট্যাকা। তাহেলে ১০০ কেজি গোসে ১০ হাজার ট্যাকা বাইড়লো। তাহলে এডা ২০০ কেজির গরু ২০ হাজার ট্যাকা বাড়তি। গরুর খাবারের দামও বাড়তি’।
‘৫০ কেজি খুদ আছিল ৮০০ ট্যাকা, হইচে ১ হাজার ৪০০ ট্যাকা। ৭০ কেজি গমের খৈল আছিলো ১ হাজার ২০০ ট্যাকা, হইচে ১ হাজার ৭০০ ট্যাকা। বাড়তি দামে গরু পালছি সেই ফল পাইতেছি না। এটা গরু লাভ করলে আমরা বাল-বাচ্চা নিয়া খাইতে পারি। আমাদের দামে সাহেবরা (ক্রেতা) জীবনেও গরুর লেবে না। সাহেবগোর সস্তায় গরু চাই। আমাদের দিকে কেউ তাকায় না। আমরা মইরে গেলেও সাহেবরা খেয়াল করে না’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর