ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের এমন দুরাবস্থার কথা। প্রতিবার ঈদের আগে টাকা দিতেন ট্যানারি মালিকরা।
আর প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে না পারলে পাড়া-মহল্লায় ঢুকে পড়বে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। পরে দাম না পেলে সেসব চামড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
রাজশাহীর সপুরা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী সাজ্জাদ আলী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কোরবানির ঈদ এলেই বাজারে লবণের দাম বাড়তে থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বাজারে লবণের দাম বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা লবণ এক হাজার ৩শ’ টাকা থেকে এক হাজার ৪শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
এতে চামড়া সংরক্ষণের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এর ওপর রয়েছে শ্রমিকদের মজুরি এবং পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ভালো নেই চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা এবার হতাশায় ভুগছেন। কারণ গত বছরের চামড়া বিক্রির টাকা তারা এখনও পর্যন্ত পাননি। ব্যবসা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে তারা।
আলম হোসেন নামের সপুরার অপর এক চামড়া ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৫ সালে প্রতি বর্গফুট কোরবানির গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা।
গত বছর লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ৫০ টাকা, রাজধানীর বাইরের জন্য রাখা হয়েছিল ৪০ টাকা। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ২০ টাকা, বকরির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা ও মহিষের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর ঈদকে সামনে রেখে এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনবেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় কিনবেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কয়েক বছর ঘুরে ফিরে চামড়ার দাম আর বাড়েনি।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত প্রতিবার ঈদে ৮০ থেকে ৯০ হাজার গরু-মহিষ ও প্রায় দেড় লাখ খাসি-ভেড়া কোরবানি হয়ে থাকে জেলায়। এই বিপুল সংখ্যক চামড়া কিনে তারা লবণ দিয়ে কয়েকদিন সংরক্ষণ করার পর নিয়ে যান নাটোরের আড়তগুলোতে। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা এখান থেকে সেসব চামড়া কিনে নিয়ে যান।
এসব চামড়ার প্রায় পুরোটাই তাদের বিক্রি করতে হয় বাকিতে। প্রতিবছর বিক্রির ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে ট্যানারি মালিকরা টাকা পরিশোধ করে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত গত ঈদের চামড়ারই প্রায় ৮০ ভাগ টাকা পরিশোধ করেননি ট্যানারি মালিকরা। ফলে ব্যবসায়ীরা পুঁজির চরম সংকটে পড়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঈদে চামড়া কিনতে না পারলে তা ফড়িয়াদের হাতে চলে যাবে।
উপযুক্ত দাম না পেলে এই চামড়া বিভিন্ন হাত ঘুরে রাজশাহীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হয়ে যাবে। এ অবস্থায় বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও সরকারের প্রতি ঈদের পর সীমান্তপথে নজরদারী এবং লবণের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানান এই ব্যবসায়িক নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৭
এসএস/জেএম