এরফলে মৌসুমী ব্যবসায়ীসহ তৃণমূলের ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।
আর প্রত্যাশানুযায়ী মূলধন যোগাড় না হওয়ায় পাইকার ব্যবসায়ীরা এবার কাঁচা চামড়ার সংগ্রহ অভিযান আশানূরুপ করতে পারেনি, তাই বরিশাল ৫০ হাজার পিস চামড়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও টার্গেট পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
বরিশালে কাঁচা চামড়া বাজারের সবচেয়ে বড়ো মোকাম পদ্মবতী চামড়া ব্যবসায়ী পল্লী ঘুরে ঘুরে এবার ঈদুল আজহায় হতাশজনক এ চিত্রের দেখা মেলে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে গত ২ বছর ধরে বকেয়া রয়েছে অনেক টাকা। যারফলে এ ব্যবসায় শ্রমিক ও পুঁজি খাটিয়ে টিকে থাকা দায় হয়ে গেছে এখানকার ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি বরিশালের ব্যবসায়ীদের অনেক সময়ই লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে হয়। তাই মূলধনের তীব্র সংকটের মধ্যে নতুনভাবে এ ব্যবসায় বিপুল পরিমাণে টাকা লগ্নি করার দুঃসাহস কেউ আর দেখাতে পারেনি।
চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানিতে গরুর চামড়ার লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার পিস নির্ধারণ ছিলো। তবে এ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি রয়েছে।
ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৪৫ টাকা বেধে দিলেও স্থানীয়ভাবে পাইকার বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে অনেক কম দামে। স্থানীয়ভাবে বড় আকারের ৩০/৩৫ বর্গফুটের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭শ টাকায়, মাঝারি আকারের ২০ খেকে ২৫ বর্গফুটের একটি গরর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকার নীচে এবং আরো ছোটো গরুর চামড়া ৪শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী সমিতি তাদের কম দরে চামড়া বিক্রি করাতে বাধ্য করছে। আর এর ফলে তাদের ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বরিশাল নগরের চামড়ার মৌসুমী ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, সকাল থেকে তিনি ৪০টির মতো চামড়া কিনেছেন। যেখানে মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৪-৫ শত টাকায় কিনেছেন, এরপর ২টি বড় আকারের ৩৫ বর্গফুটের চামড়া কিনেছেন ৮শ টাকা দরে। কিন্তু বাজারে এসে দেখেন সর্বোচ্চ চামড়ার দর ৭ টাকা পর্যন্ত উঠছে।
তিনি জানান, তারা এ চামড়া কিনতে জনবল ও পরিবহন খরচও হয়েছে। তাই সবমিলিয়ে পুরো লোকসানেই থাকতে হবে।
মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, তারা প্রতিবছর চামড়া পেয়ে থাকেন। আবার কিছু কিনেও থাকেন। গাড়ি ভাড়া করে চামড়ার পাইকার বাজারে এসে ক্রয়ের কোন প্রতিযোগিতাই দেখছেন না। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা কিছু টাকা বকেয়াও রাখতে চাচ্ছেন।
এদিকে পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান মাসুম জানান, ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৪৫ ফুট দর দিলেও এই চামড়াকেকে প্রয়োজনীয় লবণ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে তাদের যে খরচ হয় সেটির হিসাব করেননি। তাই বাধ্য হয়ে কাঁচা চামড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শ হিদুর রহমান শাহীন জানান, মূলধনের এতটাই অভাব যে অধিকাংশ পাইকার মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও বাকিতে চামড়া কিনছেন। আর সার্বিক কারণে চামড়া কেনাকাটায় থেকে সংগ্রহ অভিযান সবখানেই ভাটা পড়েছে। যারফলে পাইকারি কাঁচা চামড়ার বাজারে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
তবে শনিবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চামড়া পট্টিতে কর্মব্যস্ত দেখা গেছে বিভিন্ন স্তরের শ্রমিকদের।
বাংলাদেশ সময়: ০২০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৭
এমএস/এসএইচ