চালের দামের এই লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা। ধীরে ধীরে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে তা।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাবুবাজার ও কারওয়ান বাজারের খুচরা ও পাইকারি চালের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিমতই পাওয়া গেছে।
খুচরা বাজার থেকে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিকেজি মোটা চাল(গুটি, স্বর্ণা, বিআর-২৮,পারিজা) বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। অথচ কোরবানির ঈদের আগে ছিল ৪৫-৪৬ টাকা। ১ নাম্বার মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। অথচ ঈদের আগে ছিল ৫৪-৫৫ টাকা। নাজিরশাইল চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। অথচ ঈদের আগে ছিল ৫৮-৬০ টাকা।
সেই হিসেবে বিগত ১৫ দিনে এক ধাক্কায় খুচরা বাজারে তিন প্রকারের চালে দাম বেড়েছে কেজিতে ৭ টাকা থেকে ১০ টাকা। এক লাফে চালের এতো বেশি মূল্যবৃদ্ধি দেশি বাজারে এর আগে খুবই কমই দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা চালের এই মূল্য বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি কারণ দাঁড় করিয়েছেন। এসবের মধ্যে আছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক উপর্যুপরি বন্যা, ব্যাপক ফসলহানি, অবৈধভাবে মজুতকৃত চাল মিলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যর্থতা, দেরিতে চালের আমদানি শুল্ক কমানো, বন্যাদুর্গত মানুষকে ত্রাণ হিসেবে চাল দেওয়া ও নতুন করে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খুব শিগগির তা কমবে এমন কোনো লক্ষণ তারা দেখছেন না। উল্টো চাল রপ্তানিতে ভারত নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় আগামী সপ্তাহের দিকে চালের বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বলা চলে, ২০১৭ সালে চালের দাম স্থিতিশীল হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
বাবুবাজারের চালের ব্যবসায়ী আল্লাহর দান ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল মোমেন বাংলানিউজকে বলেন, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী চালের যোগান নেই দেশে। যোগান ঘাটতির পেছনে যেমন কিছু যৌক্তিক কারণ আছে, তেমনি কিছু অযৌক্তিক কারণও আছে।
তিনি বলেন, চালের দাম না কমার অন্যতম দুই কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে মজুত করা চাল মিলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে সরকারের ব্যর্থতা ও সংকট শুরু হবার আগেভাগেই চালের আমদানি শুল্ক না কমানো। এই দুই জায়গায় সরকারের ব্যর্থতার কারণে চলতি বছর চালের দাম আর খুব একটা কমবে না বলে মনে হচ্ছে।
কাওরান বাজারের চালের খুচরা বিক্রেতা মো. বশির আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, শুনলাম ভারত নাকি নতুন করে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই সুযোগে তো মজুতদার ও আড়তদাররা চালের দাম আরও বাড়ানোর অপচেষ্টা চালাবে। সরকার যদি অবৈধভাবে মজুত করা চাল উদ্ধার করতো তাহলে বাজার আবার স্থিতিশীল হয়ে উঠতো।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে মজুত করা চাল বের করতে গিয়ে দেখা যাবে সরকারি দলের নেতাদের মদদপুষ্ট মিল মালিকদের একটি বড় অংশ এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তাই তাদের থেকে চাল বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই চলে।
এদিকে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, বাজারে প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন চাল থাকার পরও একটি অসাধু চক্র চাল নিয়ে ষড়যন্ত্র করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, যদি মন্ত্রীর কথা সত্য হয়ে থাকে তাহলে সরকার এতো দিন ধরে মজুতকৃত চাল বের করে আনছে না বা আনতে পারছে না কেন? সরকারের ইমেজ সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে, তার পরও সরকার কেন শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না?বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
এমএসি/জেএম