বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা ক্রমশই শোচনীয় হয়ে উঠছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে খোলা বাজারে চাল বিক্রি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর সাহেব বাজার, কুমারপাড়া ও কাদিরগঞ্জ এলাকার পাইকারী চালের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারসাজিতে চালের দাম কমছে না। বরং হু হু করে বেড়েই চলেছে।
বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণ দেখিয়ে বলা হচ্ছে অধিকাংশ ধানক্ষেত ডুবে গেছে। যে কারণে এবার ঈদের আগ থেকেই ধান-চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দ্বিতীয় দফা এলসির শুল্ক প্রত্যাহার হলেও চালের দামের উপর এর প্রভাব পড়েনি। ঈদের পর চালের দামের পাগলা ঘোড়া যেন আর থামছেই না!
রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার এলাকার এপি চালের আড়তের বিক্রেতা মিল প্রসাদ জানান, রাজশাহীতে মোটা স্বর্ণা চাল দু’দিন আগেও প্রতিকেজি ৫০ টাকা, আটাশ ৫৪ টাকা, মিনিকেট ৬০ টাকা, পায়জাম ৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬২ টাকা, বাসমতি ৫৮ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু আজ মোটা স্বর্ণা চালের দামই উঠেছে ৬০ টাকা কেজিতে।
‘এভাবে আটাশ, মিনিকেট, পায়জাম, নাজিরশাইল ও বাসমতি চালের দামও এক লাফে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। এছাড়া বাজারে আজ পোলাওয়ের চাল কালোজিরা ৯০ টাকা ও চিনিগুড়া চাল ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ’
তিনি বরেন, শনিবার মোটা স্বর্ণা ধানই ১৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এরপরও রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে পর্যাপ্ত ধান পাওয়া যাচ্ছে না। সামনে আউশ-আমন ধান উঠতে শুরু করলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে।
এদিকে আকস্মিকভাবে চালের দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শুধু বন্যার কারণে নয়, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একটি চক্র চালের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন রাজশাহীর সাধারণ ক্রেতারা।
রাজশাহীর শালবাগান বাজারে চাল কিনতে আসা দিনমজুর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চালের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে দিনমজুরদের তিন বেলার বদলে এক বেলা খেয়ে বাঁচতে হবে। না হয় না খেয়ে মরতে হবে। সারাদিন কাজ করলে মজুরি পাওয়া যায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
‘এখন তাও আবার রোজ কাজ থাকে না। এখন ৩০০ টাকা দিয়ে দুই কেজি চাল কিনলে আর কয়টাকা থাকে। এর সঙ্গে তরিতরকারিসহ অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। এজন্য চালের দাম নাম কমলে দিনমজুরদের না খেয়েই মরতে হবে। ’
অভিযোগ রয়েছে দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে উত্তরবঙ্গের মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বোরো ও আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে চাল কিনে গুদামজাত করেন তারা। বাজারে সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করে তোলারও অভিযোগ আছে।
রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর ছাড়াও আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বগুড়ার সান্তাহার ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় তিন শতাধিক চাল মিল ব্যবসায়ী রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ জন বড় মিল মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সংকটকে পুঁজি করে তারাই দফায় দফায় চলের দাম বাড়ায়। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি।
রাজশাহীর জেলার সহকারী খাদ্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকার খোলাবাজারে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু হলে চালের বাজার আবারও স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
এজন্য রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে রাজশাহী মহানগরীর ১৫টি পয়েন্টে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে খোলা বাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হবে। শনিবার বাদে সপ্তাহের ৬দিন প্রতিটি ডিলার ১৫ টাকা কেজি হিসেবে প্রতিদিন ১ মেট্রিকটন (১ হাজার কেজি) করে চাল বিক্রি করবেন। পরিবার প্রতি ১ জন সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে চাল কিনতে পারবেন।
পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত চাল বিক্রি চলবে বলেও জানান খাদ্য কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
এসএস/এমএ