ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার

ঢাকা: হাওরে বন্যা এবং ব্লাস্ট রোগে বোরো ধান বিনষ্ট হওয়ায় সংকট তৈরির পর মিল মালিক এবং আড়তদারেরা কারসাজি করে চালের বাজার অস্থির করে তুলেছে। এই অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি সপ্তাহে মিল মালিক, চাল ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারকদের নিয়ে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং টিম আরো জোরালোভাবে কাজ করবে।

 
 
ঈদের পর চালের দর কেজিপ্রতি অন্তত ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল ৫০-৫২ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চালের এ ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ রয়েছে সরকারে।  
 
দেশে এক কোটি মেট্রিকটন চাল মজুত আছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলছেন, আরো আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য পরিস্থিতির তথ্য তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মন্ত্রী।  

ঘাটতির কারণ
চলতি মৌসুমে আগাম বন্যায় হাওরাঞ্চলে ফসলহানির কারণে ৩৪ টাকা মূল্যে চাল সংগ্রহ করা যায়নি। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এজন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।  
 
>>>হাওরে আগাম বন্যা এবং সারা দেশে ব্লাস্ট রোগের কারণে ২০লাখ মেট্রিকটন বোরো ক্ষতি হয়েছে। আর বোরো ফসল নষ্ট হওয়ার পর থেকেই চালের বাজারে অস্থিতিশীল করে তুলেছে এক শ্রেণির অসাধু চক্র।  
 
>>>বোরো ধান নষ্ট হওয়ার পরেও এক কোটি ৭০ লাখ মেট্রিকটন ঘরে এসেছে। টার্গেটের ২৩ লাখ মেট্রিকটনের জায়গায় ২২ লাখ মেট্রিকটন আউশ ধান উঠেছে। সবমিলে এক কোটি ৯২ লাখ মেট্রিকটন ধান পাওয়া গেছে।  
 
>>>আমরা প্রতিদিন ৮৫ হাজার মেট্রিকটন চাল খেয়ে থাকি। চারমাসে এক কোটি দুই লাখ মেট্রিকটন খেয়েছি। তারপরেও এক কোটি মেট্রিকটন চাল আছে। এই চালগুলো মিল মালিক, আড়তদার এবং ব্যবসায়ীদের কাছে।  
 
চালের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে ২৮ শতাংশ থেকে ট্যাক্স কমিয়ে ২ শতাংশ করার পর ভারত থেকে এ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ছয় লাখ মেট্রিকটন চাল আনা হয়েছে। এই চাল সাধারণ ভোক্তার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। আর সরকারি আমদানির চাল রেশন এবং খাদ্যবান্ধব ওএমএস খাতে চলে যায়।  
 
বেসরকারি আমদানি
উচ্চমূল্যের কারণে বোরো ধান ১২লাখ মেট্রিকটনের জায়গায় মাত্র আড়াই লাখ মেট্রিকটন সংগ্রহ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চাল আমদানি করে সমস্যা সমাধান করার কথা জানায় খাদ্য মন্ত্রণালয়।  
 
>>>বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত ১৯ লাখ মেট্রিকটনের এলসি খুলে ৬ লাখ মেট্রিকটন চাল ভারত থেকে এসেছে।  
 
সরকারি আমদানি
পুলিশ-বিজিবি-আর্মির রেশন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ এর মতো সরকারি খাতে ১৫-১৭ লাখ মেট্রিকটন চাল প্রয়োজন হয়। সরকারিভাবে আমদানির চাল পুরোটাই সরকারি খাতে নির্বাহ করা হয়। বাজার থেকে কেনা হয় না।  
 
>>>ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ মেট্রিকটন চাল এসেছে। জাহাজীকরণ হয়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার মেট্রিকটন। এক লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিকটন গুদামে উঠেছে। বাকিটুকু বন্দরে খালসের অপেক্ষায়।  
 
>>>কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ মেট্রিকটনের চুক্তি হয়েছে। এজন্য এলসি খোলা হয়েছে। এই চাল তিন মাসের মধ্যে চলে আসবে। ৩০ দিনের মধ্যে আসবে ৫০ হাজার মেট্রিকটন। অক্টোবরের মধ্যে ১ লাখ এবং নভেম্বরের মধ্যে পুরো চাল আসবে।  
 
>>>মিয়ানমার টিম ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসবে। দুই লাখ মেট্রিকটন চাল পাওয়ার আশা করছে সরকার। খাদ্যমন্ত্রী বলছেন, ভিয়েতনাম থেকে ১৫-২০ দিন লাগলেও মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামে দুই দিন, মংলাতে তিন দিনে চাল আসবে। পরিবহন খরচ কম থাকার কারণে দামও কম পড়বে। চালের মানও ভালো হবে।  
 
>>>সাতটি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন চাল এসেছে। জাহাজীকরণ হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৪১ মেট্রিকটন। ৩০ হাজার মেট্রিকটন চাল ঘরে এসেছে। সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন এলসি হয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন চাল চলে আসবে।  
 
>>>নিম্নমানের হওয়ায় ৩২ হাজার মেট্রিকটনের টেন্ডারের দুটি জাহাজের চাল ফেরত পাঠায় সরকার।  
 
মজুত, আমদানি ও উৎপাদন মিলে চাহিদার সমান
খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে সরকারের কাছে যা মজুত আছে এবং আমদানি ও উৎপাদন হবে তা মিলে চাল নিয়ে আর ভয়ের কোনো কারণ নেই।  
 
>>>তিন মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ১০টাকা কেজির চাল সাড়ে চার লাখ মেট্রিকটন খরচ হবে। এরপর আর বড় কোনো কর্মসূচি নেই। আবার মার্চ-এপ্রিলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এবার আমন উঠবে ১ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিকটন খরচ। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে শুধু জমা হবে চাল। সরকারিখাতে এই সময় ৪০-৫০ হাজার টন খরচ হবে।
 
>>>সেপ্টেম্বর-নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দুই লাখের বেশি চাল প্রয়োজন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দেড় লাখ মেট্রিকটন, ভিজিডি ৩০ হাজার মেট্রিকটন ছাড়াও রেশন এবং পূজায় চাল দিতে হবে। শুধু সেপ্টেম্বরে ২ লাখ মেট্রিকটনের বেশি খরচ হবে। সমুদ্রে ১ লাখ মেট্রিকটনের বেশি আছে। আমদানির চালও আসবে। অক্টোবর ও নভেম্বরে ৪ লাখ মেট্রিকটন খরচ। আমন উঠলে গুদাম ফুলে ফেপে উঠবে বলে মনে করছেন মন্ত্রী।
 
ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি
ঊর্ধ্বগতির কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওএমএস এবং ২০ সেপ্টেম্বর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হচ্ছে। ওএমএসের চাল ১৫ টাকা কেজি এবং ১৭ টাকা কেজিতে আটা বিতরণ করা হবে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৪০ হাজার মেট্রিকটনের বেশি ব্যয় হয়েছে। প্রতি পূজামন্ডবে দেয়া হবে ৫০০ মেট্রিকটন করে চাল।  
 
কঠোর সরকার
মজুত করা চাল বাজারে আনতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যে মনিটরিং টিম কাজ করছে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
 
২০ সেপ্টেম্বর মিল মালিক, ব্যবসায়ী সমিতি, আমদানিকারকদের ডেকেছেন খাদ্য মন্ত্রী। এতে বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।

**গুজবে বাড়ছে দাম, মিনিকেট ৬৫ নাজিরশাইল ৭০ টাকা কেজি!

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।