ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফেডারেল করপোরেশনের শুল্ক ফাঁকি প্রমাণিত

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
ফেডারেল করপোরেশনের শুল্ক ফাঁকি প্রমাণিত ফেডারেল করপোরেশনের শুল্ক ফাঁকি প্রমাণিত

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের মেসার্স ফেডারেল করপোরেশন বন্ড সুবিধার মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করে তা অবৈধভাবে অপসারণের মাধ্যমে সরকারের ৩৮ কোটি ৫৩ লাখ ২২ হাজার ৩৮৮ টাকা ৮৯ পয়সার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। আর এই শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে  প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ১ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস আদালতে চলতি মাসের ১২ তারিখে এই রায় দেওয়া হয়েছে। রায়ে ১৫দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জরিমানাসহ শুল্ক ফাঁকির অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে।


 
ফেডারেল করপোরেশনের শুল্ক ফাঁকি বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, মেসার্স ফেডারেল করপোরেশন বন্ড সুবিধার মাধ্যমে ইপিজেড থেকে আমদানিকৃত ১৪৯টি চালানের মাধ্যমে ৭ হাজার ১৬৫ দশমিক ৫৪৩৫ মেট্রিক টন ডুপ্লেক্স বোর্ড তাদের বন্ড রেজিস্টারে অপ্রদর্শিত রয়েছে। এছাড়া বিদেশ থেকে ৯০টি চালানের মাধ্যমে বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করা হলেও ৩৩টি চালান ছাড়া অন্যকোনো চালানের কাঁচামাল বন্ড রেজিস্টারে এন্ট্রি পাওয়া যায়নি। ফলে এই পণ্যগুলো বন্ড সুবিধায় আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন। যার মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৭৩৩ টাকা ৪৬ পয়সা। আর এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর কাস্টমস আইনে একটি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা।
 
শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে অবৈধভাবে পণ্য অপসারণের মাধ্যমে সরকারের আরও ৮০ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৪ টাকা ৪৬ পয়সার শুল্ক ফাঁকি দেয়। যে কারণে শুল্ক গোয়েন্দা সেই তথ্য উৎঘাটন করে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাস্টমস আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নাম্বার ১২/২০১৬। ফলে সবমিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ৩৮ কোটি ৫৩ লাখ ২২ হাজার ৩৮৮ টাকা ৮৯ পয়সার শুল্ক ফাঁকি দেয়।
 
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা যায়, মামলা দায়েরের পরে প্রতিষ্ঠানটিকে মামলা  সংক্রান্ত তথ্য ও যাবতীয় দলিলাদি পাঠাতে বলা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো তথ্য পাঠায়নি। এমনকি মেসার্স ফেডারেল করপোরেশনের দাখিলকরা বন্ড রেজিস্টারটিও ভূয়া বলে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া মামলাটি নিষ্পত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। চলতি বছরের ৩১ জুলাই সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় পরিদর্শনকালে কোনো অস্তিত্ব পায়নি শুল্ক গোয়েন্দা। এমনকি ৩১ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট ঠিকানায় গিয়েও কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি শুল্ক গোয়েন্দা। অপরদিকে চলতি বছরের ১ আগস্ট মামলাটির শুনানিতে  প্রতিষ্ঠানটিকে উপস্থিত থাকতে চিঠি দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কেউ উপস্থিত হননি।
 
এদিকে বিচারিক আদেশে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগটি নিষ্পত্তিতে শুনানিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কেউ উপস্থিত না থাকায় অন মেরিটে ( on merit) এ মামলাটি নিষ্পত্তি করা হলো। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হলো।
 
এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অপরাধে যে দুটি মামলা করেছিলো তার জয় হলো। এতে করে ফাঁকি দেওয়া অর্থ এখন প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। এছাড়া বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)  ও শুল্ক গোয়েন্দা যে কঠোর মনোভাব পোষণ করেছে এই রায়ের মাধ্যমে সেটার একটা প্রতিফলন হলো। এছাড়া এই রায়ের মাধ্যমে সরকারের ৩৯ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হলো বলেও তিনি জানান।

জানা যায়, মেসার্স ফিউচার এক্সেসরিজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও মেসার্স ফেডারেল করপোরেশনের মালিক আরমান উদ্দিনের (৩৫) বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা থানার চরগাছা গ্রামে। মেসার্স ফেডারেল করপোরেশনের কারখানা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার ভুঁইগড় এলাকায় এবং করপোরেট অফিস মতিঝিলের ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ।  

২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর ফেডারেল করপোরেশন বন্ড লাইসেন্স নেয় (বন্ড লাইসেন্স নম্বর (৭৪৯)। এছাড়া ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর ভ্যাট নিবন্ধন (১৯২৬১০১৪৮৩২) নম্বর নেয়। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠান দু’টি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দু’টির কোনো অস্তিত্ব নেই। এছাড়া ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে না পারায় উত্তরা ব্যাংক তার যাবতীয় সম্পত্তি নিলাম তুলেছে বলেও জানা গেছে।

২০১৫ সালের নভেম্বরে মেসার্স ফেডারেল করপোরেশনের চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ কন্টেইনার আর্ট কার্ড জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা। প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ২৫০ জিএসএম আর্ট কার্ড আমদানি করে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটি ৩০০ ও ৩৫০ জিএসএম ঘোষণা দিয়ে ২৭৫ টন আর্ট কার্ড আমদানি করে। এসব কার্ড ১১টি কন্টেইনারে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।  এ ঘটনায়ও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা। বর্তমানে সেই মামলাও চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এসজে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।