এক সপ্তাহ আগে মোটা চালের দাম বেড়ে কেজি প্রতি ৫০ টাকা এবং সরু চালের দাম ৭০ টাকা পর্যন্ত ওঠার পর সরকারের তিন মন্ত্রী মিলে চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের সাথে বৈঠক করেন।
বৈঠকের এক সপ্তাহ পর সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে চালের বাজারে ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক খবর মিলেছে।
পাইকারি বাজারে চিকন চালের দাম পাঁচ টাকা এবং মোটা চালের দামও পাঁচ থেকে সাত টাকা করে কমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি সুবিধা বৃদ্ধি, মজুত ও বাজার মনিটরিংয়ের কারণে চালের দাম কমে এসেছে। পাইকারি বাজারে বেশি দামে কেনা চাল বিক্রি হয়ে গেলে আরও কমে যাবে।
চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিক লায়েক আলী বলেন, মিলে এখন আর চাল বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে কাস্টমার নাই।
বিক্রি না হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, হয়তো বাজারে চালের অভাব নাই। মজুতের সাথে এমন কেউ ছিল যারা চাল বাজারে ছেড়েছে। নিঃসন্দেহে সাপ্লাই বাড়ছে। প্রোডাকশন তো থেমে নেই। মিলে কেনাবেচা নাই।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি যাতে মজুত না হয় সেজন্য ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের গুদামে অভিযান পরিচালনা করে বেশকিছু গুদাম সিলগালা এবং জরিমানা করেছে সরকার।
মজুত রাখার কারণে প্রশাসন উল্টো যেন ব্লেইম না দেয়, সেজন্য হয়তো মিল থেকে ব্যবসায়ীরা চাল কিনছে না বলে মনে করেন লায়েক আলী।
তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে এখন ৬১ টাকার সরু চাল ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানির জন্য যারা এলসি খুলেছে আগের ৪৪ টাকা থেকে কমে ৪১-৪২ টাকায় এসেছে মোটা চাল।
ঈশ্বরদী চাল ব্যবসায়ীদের নেতা খায়রুল ইসলাম জানান, বস্তায় ২০০ টাকা করে দাম কমেছে। কৃত্রিম সংকট ছিল। যখন দাম বাড়ে তখন সবাই কেনে। ভারত থেকে চাল আসবে না- এমন গুজবে দাম বেড়েছিল। এখন আমদানি হবে। সেজন্য দাম কমছে।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা জেলার সভাপতি আইয়ুব বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের সাথে আমাদের মিটিংয়ের পর পাইকারি বাজারে খুব তাড়াতাড়ি দাম চালের দাম কমেছে। খুচরায় কমতে কিছুটা সময় লাগবে, কারণ বেশি দামে কিনে তো লোকসান দেবে না।
তিনি জনান, মোটা চাল বস্তা যেখানে আগে ২৪০০-২৫০০ টাকা ছিল তা কমে ২০০০-২১০০ টাকায় এসেছে। চিকন চালের বস্তা ২৬০০ থেকে কমে হয়েছে ২৪০০ টাকা।
মিল থেকে আর এখন কেউ চাল কিনছে না দাবি করে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, ১৫ টনের ওপরে মজুত রাখা যাবে না- এ ভয়ে হয়তো চাল কিনছে না। ম্যাজিস্ট্রেটের তদারকির ভয়ে মজুত করছে না।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরকারের সাথে বৈঠকের পর এ পর্যন্ত কোনো চাল বিক্রি হয়নি বলে দাবি করেন বাচ্চু। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১২০০ বস্তা উৎপাদন ও বিক্রি হলেও সেটা তলানিতে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের ওই সভায় প্লাস্টিকের বস্তায় তিন মাস চাল আমদানি ও বিক্রি, বাজার মনিটরিং, আদমানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সারা দেশে ওএমএসের চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়।
চালের দাম আরও কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাচ্চু। তিনি বলেন, আমদানিও বেড়ে গেছে। এখনও বাজারে চালের অভাব নাই। আর বাজারে ভর্তি ধান রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এবার ধানের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাজারে নতুন ধান চলে আসবে। ফলে আর কোনো অভাব হবে না। মজুত না হলে আর দাম বাড়বে না বলে মনে করেন আইয়ুব বাচ্চু।
পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে বিক্রি করা মিরপুর ১১ নম্বরে মেসার্স বেঙ্গল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, ৬০ টাকার মিনিকেট ৫৬ টাকা এবং ৫০ টাকার মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়।
এখন বেচাকেনা খারাপ জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আগে চাল কিনেছে সেগুলো বিক্রি করছে। নতুন কেনা চালে খুচরা বাজারে দাম আরও কমে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ