দেশে বিনিয়োগের স্থিতিশীল পরিবেশ থাকায় পুঁজিবাজারের পাশাপাশি সব খাতে সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে। বিনিয়োগ বাড়ায় প্রকৃত মুনাফাও বেড়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, ২০১০ সালের পর থেকে ব্যাংকের শেয়ারকে ‘পচা’ শেয়ার বলা হতো। এই শেয়ারগুলো এমন খারাপ অবস্থায় ছিলো যে, ফেসভ্যালুর কাছাকাছি কিংবা তার চেয়েও কম দামে লেন-দেন হয়েছে।
কিন্তু মুনাফা বাড়ায় সেই শেয়ারগুলোরই দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরাও ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে, ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম বাড়লে পুঁজিবাজারে দরের উত্থান ঘটে। আর ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম কমলে পুঁজিবাজারে দরপতন হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে পুঁজিবাজারে থাকা ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়কালে মুনাফা হয়েছিলো ৮৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই প্রান্তিকে ব্যাংকের নিট মুনাফা ৮০৫ কোটি টাকা বেশি।
এর আগের ছয়মাসে ব্যাংকগুলোর মুনাফা হয়েছিলো ৩ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। সব মিলে তিন প্রান্তিকে ব্যাংকের মোট মুনাফা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬৮৩ কোটি টাকায়।
গত বছরে মোট মুনাফা হয়েছিলো ৬ হাজার ৩৫৯ কোটি ২০ হাজার টাকা। এর আগের বছর (২০১৫ সাল) মুনাফা হয়েছিলো ৫ হাজার ৮৯২ কোটি ৯০ হাজার টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, এবার আগের বছরগুলোর চেয়ে মুনাফা বেশি হবে।
তৃতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। প্রতিষ্ঠানটির মোট মুনাফা হয়েছে ১৫০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এতে ইপিএস ১ টাকা ৩ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৭৬ পয়সায়। একই সময়ে ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা মুনাফা করে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল)। ফলে ব্যাংকটির ইপিএস ৭৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ২৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
মুনাফার তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক। ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ১১৮ কোটি টাকা। ফলে ইপিএস ১ টাকা ৭ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ২৯ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
১১৩ কোটি টাকা মুনাফা হওয়ায় চতুর্থ স্থানে থাকা এক্সিম ব্যাংকের ইপিএস ৪৮ পয়সা থেকে বেড়ে ৯০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এরপর ন্যাশনাল ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ১০২ কোটি টাকা। তাতে ইপিএস ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৪৩ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। সিটি ব্যাংকের ৮০ কোটি টাকাসহ বেশিরভাগ ব্যাংকেরই মুনাফা বেড়েছে।
তবে এ সময়েও সবচেয়ে কম মুনাফা করেছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক। মুনাফার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬ কোটি টাকা, ৭ কোটি টাকা ও ২০ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকগুলো গত বছরের ব্যবসায় ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। চলতি বছরের ব্যবসায়ও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ খাতে এমন কিছু হয়নি যে, ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই ব্যাংকিং খাত নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু নেই।
আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকের ভালো মুনাফা হয়েছে। পাশাপাশি অনান্য খাতেও ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে। ফলে ভালো অবস্থানে ফিরছে ব্যাংক খাত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
এমএফআই/এএসআর