ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গতিহীন দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৪ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৮
গতিহীন দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন দীর্ঘ যানজটে আটকে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহন। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: গতিহীন হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। গেল সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (১০ মে) সকাল থেকে শুরু হওয়া লাগাতার যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এ পথে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকরা।

ফেনী শহরের ফতেহপুরে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ কাজকে ঘিরে সৃষ্ট যানজট ছড়িয়ে পড়েছে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তা দেশের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের (সিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এভাবে যানজট চলতে থাকলে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। পণ্য ড্যামেজ হয়ে যাবে। আমাদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান করা।

রোববার (১৩ মে) মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় এ পথে চলাচলকারীদের অসহনীয় দুর্ভোগের চিত্র।  

বিকেল সাড়ে ৪টায় মহাসড়কের ফেনীর রামপুর রাস্তার মাথা এলাকায় গিয়ে কথা হয় কাভার্ডভ্যান চালক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। শনিবার (১২ মে) সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে রওনা দিয়েছেন তিনি। ফেনীর এই স্থানে পৌঁছেছেন রোববার বিকেল ৪টায়।  

জয়নাল আবেদীন জানান, যেখানে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী আসতে সময় লাগে ২ ঘণ্টারও কম, সেখানে এখন পর্যন্ত সময় লেগেছে ২২ ঘণ্টা।  

লালপোল এলাকায় গিয়ে কথা হয় একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক আবদুর রহমানের সঙ্গে।  তিনি জানান, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়েছেন। মাত্র দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লেগেছে ২৪ ঘণ্টা।

এমন যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগে যাত্রীরা। মহাসড়কের আশেপাশে মেলে না কোনো খাবারের দোকান। নেই টয়লেটের ব্যবস্থাও। সঙ্গে যোগ হয়েছে রাতের অন্ধকারে ছিনতাইয়ের ভয়।

যানজটে আটকে অ্যাম্বুলেন্সের রোগীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের ৫-৬ ঘণ্টার পথ ৩০-৩৫ ঘণ্টায়ও পার করা যাচ্ছে না। শিশু ও নারীদের অবস্থা বেশি শোচনীয়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কে যানজটের মূল কারণ ফতেহপুর এলাকার রেল ক্রসিংয়ে উড়াল সেতুর (ওভারপাস) নির্মাণ কাজ। একদিকে বিলম্বিত নির্মাণ, অপরদিকে মহাসড়কে ওভারপাস নির্মাণকালীন সময়ের জন্য পরিকল্পিত ডাইভারশন (বিকল্প সড়ক) নির্মাণ না করাই যানজটের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

মহাসড়কে মহিপাল ফ্লাইওভারের ৬ লেন ও দুই পাশে দুই লাইন করে চার লেনসহ ১০ লেনের সব যানবাহন ফতেহপুর ফ্লাইওভারে এসে এক লাইন দিয়ে পার হচ্ছে। এতে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।  

ফেনী জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম নবী বলেন, ওভারপাসের নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই চলাচলের জন্য যে অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে যানবাহনের চাপ বিবেচনা করা হয়নি। যেখানে চার লেনের অ্যাপ্রোচ রোড দরকার, সেখানে দুই লেনের কোনো রকম অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করা হয়েছে। তাও আবার একমুখী চলাচল করানো হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না গাড়ি। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
দীর্ঘ যানজটে আটকে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহন।  ছবি: বাংলানিউজ
মহাসড়কে ফতেহপুর এলাকায় যানজটের আকার তীব্র হওয়ায় মাঝে মাঝে বিকল্প সড়ক হিসেবে স্টার লাইন ফিলিং স্টেশন থেকে শহরের ট্রাংক রোড দিয়ে কিছু যান চলাচল করতো। কিন্তু ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ওই সড়কেরও বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত ও কিছু অংশ ডেবে যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে যায়। বর্তমানে মেরামতের কাজ শুরু করায় ওই সড়কে যান চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে রয়েছে।  

যানজট থেকে রেহাই পেতে বাস-ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানগুলো মহাসড়ক ছেড়ে ফেনী শহর ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সড়কে ঢুকে পড়তে বাধ্য হয়। এতে ফেনীর শহরের সড়কগুলোও অল্প সময়ের মধ্যে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানেও তৈরি হচ্ছে যানজট।  

এ ব্যাপারে, ফেনীর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ হোসেন বলেন, কাজটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলেও এটি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হচ্ছে। তারা এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পারবেন না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে নির্মাণাধীন ওভারপাসের একটি লেন খুলে দেয়া হতে পারে।

জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ মে একটি লেন চালু করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে গত ক’দিনের অতিবর্ষণে নির্মাণ কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

ফেনী জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মীর গোলাম ফারুক বলেন, ভয়াবহ এ যানজট পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। যে অংশে গাড়ি চলছে না, সেখানে নিরাপত্তায় পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে।

ফেনী পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, যানজট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়কে পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। ভোগান্তিতে পড়া সাধারণ যাত্রীদের এ সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করবে সরকার।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা,  মে ১৪, ২০১৮
এসএইচডি/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।