ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফি-খেলাপি কোম্পানিগুলোর কাছে ডিএসই অসহায়!

এসএম গোলাম সামদানী স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১০
ফি-খেলাপি কোম্পানিগুলোর কাছে ডিএসই অসহায়!

ঢাকাঃ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে(ডিএসই) তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি বছরের পর বছর দিচ্ছে না তালিকাভুক্তি ফি।   এজন্যে জরিমানা করার পর দিচ্ছে না সে জরিমানাও।

এসব অপরাধের জন্য আছে তালিকাচ্যুত করার বিধান। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানির আশঙ্কায় ডিএসই তা করছে না। আর এ সুযোগে বিধানকে তোয়াক্কা না করে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ওসমান ইমাম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ৭ বছর পরেও কেন ডিএসই‘র মনে হলো কোম্পানিগুলো লিস্টিং ফি জমা দিচ্ছে না। জমা না দেয়ার প্রথম বছরই কেন ডিএসই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। একইসঙ্গে ডিএসই প্রথম বছর যদি এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের  অবহিত করতো তাহলে তারা এখানে বিনিযোগ করত না। তিনি আরো বলেন, আমেরিকাতে প্রথম মার্কেট, দ্বিতীয় মার্কেট এবং তৃতীয় মার্কেট রয়েছে। ফলে প্রথম মার্কেটে কোনো কোম্পানি অনিয়ম করলে তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় মার্কেটে নামিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও সে রকম মার্কেট করা উচিত।         

ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে তাদের পরিশোধিত মূলধনের ওপর নির্দিষ্ট হারে তালিকাভুক্ত ফি জমা দিতে হয়। কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি টাকা হলে বছরে ১০ হাজার টাকা, ১০ কোটি টাকা হলে ৪০ হাজার টাকা, ৫০ কোটি টাকা হলে ৭৫ হাজার টাকা এবং ১০০ কোটি টাকার বেশি হলে বছরে ১ লাখ টাকা ফি দিতে হয়।
 
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী তালিকাভুক্তি ফি ও জরিমানা বাবদ ৯ কোম্পানির কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’র (ডিএসই) ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ২০০টাকা পাওনা রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো আলহাজ্ব টেক্সটাইল, সমতা লেদার, লিগেসি ফুটওয়্যার, ফেডারেল ইন্সুরেন্স লিমিটেড, ফাইন ফুড লিমিটেড, কাসেম সিল্ক, থিরাপিউটিকস, বিডি ওয়েলডিং ও চিটাগং ভেজিটেবল।

এ ব্যাপারে গত ২৪ আগস্ট ডিএসই‘র লিস্টিং বিভাগ থেকে ওই ৯ কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানি সর্বোচ্চ ৭ বছর ধরে ডিএসইতে তালিকাভুক্তির ফি জমা দিচ্ছে না।

এদের মধ্যে প্রথম ৪টি কোম্পানি গত দুই বছর ধরে ডিএসইতে কোনো তালিকাভুক্তি ফি জমা দিচ্ছে না। এই চার কোম্পানির কাছে জরিমানাসহ ডিএসইর পাওনা হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৩২৫ টাকা।

অন্যদিকে ফাইন ফুড লিমিটেড গত ৪ বছর ধরে, কাসেম সিল্ক ও থিরাপিউটিকস ৫ বছর ধরে, বিডি ওয়েলডিং ৬ বছর এবং চিটাগং ভেজিটেবল ৭ বছর ধরে কোনো ফি দিচ্ছে না।   এই ৫ কোম্পানির কাছে পাওনা ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৫ টাকা। শুধু চিটাগং ভেজিটেবল এর কাছে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০ টাকা তালিকাভুক্তি ফি সহ জরিমানা পাওনা রয়েছে ।

ডিএসইর বিদ্যামান আইন অনুযায়ী কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে নিয়মিতভাবে বার্ষিক তালিকাভুক্তি ফি প্রতি বছর ৩১ শে মার্চের মধ্যে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানি ফি জমা না দিলে কোম্পানির বিরুদ্ধে ১.৫ হারে সারচার্জ আরোপ করা হয়। তারপরেও কোনো কোম্পানি ফি এবং জরিমানা পরিশোধ না করলে সর্বশেষ শাস্তি হিসেবে ওই কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

ফি, জরিমানা কিংবা অন্য কোনো অনিয়মের অভিযোগে কোনো কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হলে বিনিয়োগকারীদের  টাকা ফেরত পাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকে না। তাই বিধানটাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।  

এ ব্যাপারে চিটাগং ভেজিটেবলের চেয়ারম্যান শামসুল আলম শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন লোকসানে আছি। সেকারণে সময়মতো লিস্টিং ফি জমা দিতে পারিনি। শিগগিরই জমা দিয়ে দেব। ’  

এ ব্যাপারে ডিএসইর সভাপতি মোঃ শাকিল রিজভী বলেন, কোনো কোম্পানি যদি বার্ষিক তালিকাভুক্তির ফি জমা না দেয় প্রচলিত অইন অনুযায়ী আমরা তাদের জরিমানা করতে পারি। তারপরেও তা পরিশোধ না করলে তাদের তালিকাচ্যুত করার নিয়ম। এটা করলে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের বিনিয়োগ করা টাকা আটকে যায়। তাই ইচ্ছা থাকলেও  এদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।