এ সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি প্রস্তুত করতে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় উঠে এসেছে এ চিত্র।
বিআইডিএস’র গবেষণায় বলা হয়েছে, কোর্সের জটিল বিষয় কতটা দক্ষতার সঙ্গে সমাধান দিতে পারেন শিক্ষকরা—এমন মানদণ্ডে সন্তুষ্টি আছে মাত্র ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে শিক্ষকদের হালনাগাদ তথ্য ও প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, শিক্ষা উপকরণ নিয়ে অসন্তুষ্ট ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী গবেষণাগারের সুবিধা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এসব সংকটের মধ্যে কোর্স সম্পন্ন করতে পারে মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। সবকিছু মিলিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বিআইডিএস গবেষণায় অংশ নেওয়া মাত্র ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বেকার সমস্যা কমিয়ে আনতে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও গবেষণায় আরও বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছে বিআইডিএস।
এ বিষয়ে বিআইডিএস’র সিনিয়র রিচার্স ফেলো মিনহাজ মাহমুদ বলেন, গুণগত মানের দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা রকম সীমাবদ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে সুযোগের অপ্রতুলতা আছে।
গবেষণা বলছে, এমন শিক্ষা নিয়েই প্রতিবছর চার-পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী চাকরি বাজারে প্রবেশ করছে। এদের মধ্যে চাকরি পাচ্ছে মাত্র ৩৪ দশমিক ১২ শতাংশ, উদ্যোক্তা হচ্ছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ আর পড়াশোনা শেষ করে পুরোপুরি বেকার থাকছেন বা চাকরি পাচ্ছে না ৩৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
জানতে চাইলে বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, প্রতি বছর গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করা ৩-৪ লাখ শিক্ষার্থীর চাকরি দেওয়া আমাদের অর্থনীতির পক্ষে সক্ষম না। এজন্য আমাদের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে। উদ্যোক্তা ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে বেকারের সংখ্যা কমবে।
আবার বিআইডিস’র গবেষণায় অংশ নেওয়া চাকরিদাতাদের ৭৭ শতাংশ মনে করেন চাকরি প্রার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতার অভাব রয়েছে। সমস্যা সমাধানে দক্ষতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন ৭০ শতাংশ চাকরিদাতা।
চাকরি প্রার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষতা নেই এমন ধারণা করেছেন ৬৭ শতাংশ চাকরিদাতা। আবার তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে চাকরি প্রার্থীদের পিছিয়ে থাকার কথা বলেছেন ৭৫ শতাংশ চাকরিদাতা।
এ বিষয়ে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পাবিলক বিশ্ববিদ্যালয় না করলো, শিক্ষামন্ত্রণালয় না করলো। আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো চাকরিদাতাদের সঙ্গে বসতে পারে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমিতি আছে, তারা কি আমাদের চাকরিদাতাদের সঙ্গে কখনো বসেন। আগামী দশ বছরে আপনাদের কি পরিমাণ জনশক্তি লাগবে। চাকরিদাতাদের চাহিদা কী, এগুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। এদের সবাই উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। পরিমাণের দিক দিয়ে ১০ লাখ ৪৩ হাজার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৯
এসই/এমজেএফ