এতক্ষণ যা পড়লেন তা মোটেও গালগপ্পো না বরং পুরোপুরি বাস্তব। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামে প্রায় সবাই মিলিয়নিয়ার।
ভিয়েতনামে যেতে হলে প্রায় ৫০০ ডলার সঙ্গে আছে এমনটা দেখাতে হয় দেশটির রাজধানী হ্যানয় এর নই বই বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে। তেমন কড়াকড়ি কোনো নিয়ম না তবে মাঝেমধ্যে দেখাতে হয়। তবে আপনার সঙ্গে যদি মাত্র ১০০ ডলারও থাকে সেটিকে ডং এ রূপান্তর করে নিলেই আপনি হবেন মিলিয়নিয়ার। ১০০ ডলার থেকে ভিয়েতনাম মুদ্রায় আপনি পাবেন ২৩ লাখ ডং এর উপরে। অর্থ্যাৎ আপনি অন্তত দুই বার মিলিয়নিয়ার হলেন।
এখানে ভাঙতি নিয়েও নেই সমস্যা। মাত্র ১০ হাজার ডং দিয়ে কিছু একটা কিনে পাঁচ লাখ ডং এর নোট দিলেও কেউ আপনাকে বলবে না-‘ভাঙতি নেই’। বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ে ‘৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ভাঙতি নাই’। ভিয়েতনামে এমন কথা কোথাও নেই। কোথাও লেখা নেই, কেউ মুখেও বলবে না। ভিয়েতনামে মোটামুটি আয় রোজগার করে এমন ব্যক্তির মানিব্যাগ ঘাটলেও দেখবেন নোট দিয়ে পরিপূর্ণ।
ভিয়েতনামের মুদ্রা ডং এর সঙ্গে বাংলাদেশের টাকার তুলনা করলে দেখা যাবে যে, টাকার দাম বেশি। এক টাকা কিনতে হলে প্রয়োজন হবে প্রায় ২৭৩ ভিয়েতনাম ডং। ডলারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় তুলনা করলে ১০০ ডলার থেকে পাওয়া যাবে প্রায় সাড়ে আট হাজার টাকা। যা ভিয়েতনামের মুদ্রায় ২৩ লাখ ডং এর বেশি।
তবে এ পরিসংখ্যানে ভিয়েতনামকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ভিয়েতনামের অর্থনীতিকে দুর্বল ভাবলেও ভুল হবে। এক সময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এখন টেক্কা দিচ্ছে চীন, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের সঙ্গে।
বাংলাদেশ নিয়ে তুলনা করেই বলা যাক। কান্ট্রি ইকোনমি ডট কম এর মতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল দুই লাখ ৮৮ হাজার ৪২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ভিয়েতনামের ছিল দুই লাখ ৪১ হাজার ২৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিডিপিতে এগিয়ে থাকলেও আসল ভেলকি পরের বিষয়গুলোতে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৭৮৮ মার্কিন ডলার। ভিয়েতনামের দুই হাজার ৫২৫ মার্কিন ডলার।
ইনোভেশন র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ১১৬তম, ভিয়েতনামের অবস্থান সেখানে ৪৫তম। বেকারত্বের হিসেব করলেও পিছিয়ে আমরা। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১ দশমিক ৮ শতাংশ।
এদিকে, ইজ অব ডুইং বিজনেস এ বাংলাদেশের র্যাংকিং ১৭৬তম ভিয়েতনামের ৬৯তম। এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিশাল অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ বাগিয়ে নিচ্ছে ড্রাগনের দেশ ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের যেখানে প্রতিবছর রপ্তানি হয় প্রায় ৩৫ হাজার ৮৫০ মিলিয়ন ডলার। সেখানে ভিয়েতনামের রপ্তানি হয় দুই লাখ ১৪ হাজার ৩২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য।
পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্মার্টফোন নির্মাতা এবং রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম। স্যামসাং পৃথিবীতে তাদের সর্ববৃহৎ কারখানা এবং গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করেছে ভিয়েতনামে। ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে ভিয়েতনামের প্রধান মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান।
বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যেও এগিয়ে আংকেল হো এর দেশ। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামে রপ্তানি হয় প্রায় ৫৩ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য। উল্টো পিঠে ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয় প্রায় ৫৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য।
তবে বিশ্ব দরবারে ঋণের দিক থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঋণ রয়েছে ৯১ হাজার ৫২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ভিয়েতনামের ঋণ এক লাখ ২৯ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে হিসাব-নিকাশের বাইরে, এখনই মিলিয়নিয়ার হতে চাইলে প্লেনে টিকেট কেটে পাসপোর্ট হাতে নিয়ে উড়ে আসুন ভিয়েতনাম। মাত্র ২৪ ডলারে পেয়ে যাবেন অন অ্যারাইভাল ভিসা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৯
এসএইচএস/আরআইএস/