রাজশাহী: রাজশাহীর আম বলে কথা, সুখ্যাতি তার জগৎ জুড়েই। ছোট-বড় কার না পছন্দ আম? এক কথায় বলতে গেলে সবারই।
আর এবার আমের রকমারি জাতের এই বহর আরও সমৃদ্ধ হতে চলেছে। কারণ একটি রঙ্গিন আম জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধন পেয়েছে। এই রঙ্গিন আমটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বারি আম-১৪’। তবে রঙ্গিন আম এর আগেও নিবন্ধন পেয়েছে। নতুন নিবন্ধন পাওয়া জাতটি এসেছে সৌদি আরব থেকে।
রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্র নতুন এই আমের জাতটি নিয়ে দীর্ঘসময় গবেষণা চালিয়ে আসছিল। সম্প্রতি আমটি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। অবশেষে নিবন্ধন পেলো উদ্ভাবিত নতুন রঙ্গিন আম ‘বারি-১৪’।
![](https://banglanews24.com/public/userfiles/images/18-12-20/09-01/19-01/19/mango-bn24-1.jpg)
এরপর দেখা যায়, প্রতি বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এই রঙ্গিন আমটি পাকে। আমটি পাকার আগে গাঢ় মেরুন আভা ধারণ করে। আমের গড় ওজন হয় প্রায় ৫৫০ গ্রাম। আঁটি বাদে এই আমের ৭৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ খাওয়ার উপযোগী। আমের গড় মিষ্টতা (টিএসএস) ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আমটি লম্বায় ১০ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ৮ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার। খোসা পাতলা ও মাংসল। নিবন্ধন পাওয়া জাতটির ধরণ ‘ইনব্রিড’। গবেষণায় সফলতা আসার পর এর নাম দেওয়া হয় ‘বারি-১৪’। এরপর নিবন্ধনের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করা হয়।
রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন জানান, গবেষণা পর্যায়ে প্রথমে ১০টি গাছে কলম করা হয়েছিল। তবে এর মধ্যে ৯টি গাছই মরে যায়। পরম যত্নে কেবল একটি গাছকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। সেখান থেকে এখন আরও চারটি মাতৃগাছ তৈরি করা হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে গবেষণা করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। আর প্রায় প্রতিবছরই গাছ থেকে রঙ্গিন সুমিষ্টজাতের এই আম পাওয়া গেছে।
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন বলেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফলের জগতে আরও একটি নতুন জাতের ফল সংযোজন হলো। এটি হচ্ছে, রঙ্গিন আমের জাত ‘বারি আম-১৪’। এছাড়াও আরও একটি নতুন ফলও নিবন্ধন পেয়েছে। তার নাম ফলসা। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বারি ফলসা-১’। আর এই দুটি ফলই অনুমোদন পেয়েছে।
![](https://banglanews24.com/public/userfiles/images/18-12-20/09-01/19-01/19/24/mango-bn24-2.jpg)
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফলসাটি ছিল রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রেই। এটি অপ্রচলিত দেশী ফল। রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রে প্রায় ২০ বছর বয়সী একটি ফলসা ফলের গাছ আছে। আকারে ছোট টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি শিশুরা খুবই পছন্দ করে। ফলটি ভিটামিন আর মিনারেলে ভরপুর।
গত ১০ বছর ধরে নতুন আমের সঙ্গে এই ফলটিরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। তারপরই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়। নিবন্ধন পাওয়া ফলসাও ‘ইনব্রিড’।
প্রতিবছরের মে-জুন মাসে ফলসা ফলটি গাছে পেকে খাবার জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে। তখন এর রঙ হয়ে ওঠে কাল বা বেগুনি। ফল হয় পাঁচ থেকে ১২ মিলিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট। নতুন এই ফলসা এবং রঙ্গিন আম সারাদেশে চাষ করা সম্ভব। গত ৩১ ডিসেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও জাতীয় বীজ বোর্ডের সচিব নতুন এই আম ও ফলসার নিবন্ধন দেন। ১৭ জানুয়ারি রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রে এগুলোর নিবন্ধনপত্র আসে।
ড. আলীম উদ্দীন আরও জানান, আম ও ফলসার নিবন্ধন পাওয়ায় তারা এখন আরও বেশি বেশি চারা উৎপাদন করবেন। এরপর সরকারি নার্সারিগুলোতে দেবেন। তবে রঙ্গিন আমের চারা এখন চাষিপর্যায়ে খুব বেশি দেওয়া সম্ভব না হলেও আগ্রহীদের অন্তত একটি করে তারা দেবেন।
এছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন নার্সারিগুলোতেও দু’-একটি করে নতুন ফল দুইটির চারা দেওয়া হবে। এর মধ্যে দিয়েই জাত দুইটি এক সময় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলেও প্রত্যাশা ও ফল দুইটির অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন রাজশাহীর এই ফল বিজ্ঞানী।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২১
এসএস/এএটি