ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাজশাহীতে তরমুজের বাজারে আগুন!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২১
রাজশাহীতে তরমুজের বাজারে আগুন!

রাজশাহী: হঠাৎ করেই রাজশাহীতে তরমুজের দাম বেড়ে গেছে! মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি তরমুজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যেই তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি।

এখন সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি।

ফলে রাজশাহীর তাপমাত্রা যেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তেমনি বাড়ছে তরমুজের দাম। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে পদ্মাপাড়ের মানুষ। দাবদাহ থেকে সামান্য পরিত্রাণ পেতে ইফতারে ধর্মপ্রাণ রোজাদাররা তরমুজই পছন্দ করেন।

কিন্তু আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে এখন আর তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেররা। এরইমধ্যে তরমুজের দাম সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অভিযোগ উঠেছে- সিন্ডিকেট করে রাজশাহীর তরমুজ ব্যবসায়ীরা মনমতো তরমুজের দাম বাড়িয়েছেন। প্রচুর সরবরাহ থাকলেও সংকটের কথা বলে তরমুজের দাম বেশি নিচ্ছেন।

সাধারণত রোজার সময় ফলের কদর বাড়ে। ফল ছাড়া ইফতার যেন কল্পনাই করা যায় না। এদিকে গ্রীষ্মকাল শুরু হলেও পরিপক্ব না হওয়ায় বাজারে এখনও আসেনি চাহিদা অনুযায়ী মৌসুমী ফল। তাই বাজারে থাকা গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজের ওপরই এখন ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।

আর এ সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা তরমুজের দাম হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছেমতো। এই মধ্য এপ্রিলেও যে তরমুজের কেজি ৩০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল এখন তা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। ফলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রমজানে দাম সহনশীল রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও রোজা শুরুর পর সেই প্রতিশ্রুতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নানান অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। এর ওপর চৈত্রের শুরুতেই প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করায় বেশি দাম পাওয়ার আশায় পরিপক্ক হওয়ার আগেই মাঠ থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করেছেন কৃষকরা।

তারা বলছেন, এখন আর মাঠে তরমুজ নেই। তাই বাজারে তরমুজের সরবরাহ কমেছে। আর তাই দামও বেড়েছে। আর ‘লকডাউনের’ কারণে দেশের বেশির ভাগ তরমুজ উৎপাদন হওয়া বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরমুজ আসতে পারছে না। এজন্য দাম বেশি।

রাজশাহীর শহরের সবচেয়ে বড় তরমুজের মোকাম হচ্ছে শালবাগান বাজার। সেখানে তরমুজ কিনতে আসা নিউমার্কেট এলাকার রমিজ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছর আগেও একটি ছোট আকারের তরমুজের (গড় ওজন ৪ কেজি পর্যন্ত) দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি আকারের তরমুজ (গড় ওজন ৫ কেজি থেকে ১০ কেজি) ৮০ থেকে ১৮০ টাকা এবং বড় আকৃতির তরমুজ (১০ কেজি থেকে তারও বেশি ওজনের) ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। তবে ইদানিং দাম বেড়ে যাওয়ায় একটি ছোট সাইজের তরমুজেরই দাম পড়ছে ২৪০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। আর একটা বড় আকারের তরমুজ সাড়ে ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা! অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি। তাহলে এত দাম দিয়ে ক'জন মানুষ আর এই গরমে রসালো তরমুজে গলা ভেজাতে পারবেন? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এদিকে, বাজার ঘুরে দেখা গেছে- সব ধরনের তরমুজের দামই আকাশ চুম্বি। প্রতিটি মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়। আকার একটু বড় হলেই তা ৬/৭শ’ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় অনেক বিক্রেতারা তরমুজ চার থেকে ৫ টুকরো করে কেজি দরে তা বিক্রি করছেন। দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে আবার একটা বড় তরমুজ কিনে দু'জন ক্রেতা সমান করে ভাগ করেও নিচ্ছেন। যে তরমুজটি মোটামুটি টাটকা সেই তরমুজটি ৬০ টাকা কেজির নিচে রাখা হচ্ছে না। আর যেই তরমুজটি এক বা দুই সপ্তাহ আগের আনা সেগুলো ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগরীর শালবাগান এলাকায় তরমুজ ব্যবসায়ী রিয়াজ আলী বলেন- তাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। এবারে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজশাহীতে তরমুজ আসছে। বর্তমানে তরমুজ প্রায় শেষের দিকে। এজন্য সরবরাহ কম।  

তার ওপর ‘লকডাউনের’ কারণে বরিশাল ও খুলনা থেকে তরমুজ আসতে পারছে না। যে কারণে মোকামেই তাদের প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ টসকা থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। সেই তরমুজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি না করলে তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। এখানে তাদের করার কিছু নেই বলেও উল্লেখ করেন এ ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।