ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাইকারিতে ফলের দাম কমেলেও কমেনি খুচরায় 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২১
পাইকারিতে ফলের দাম কমেলেও কমেনি খুচরায় 

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সারা দেশে সাত দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ চলছে। এর প্রভাব পড়েছে ফল বাজারেও।

ক্রেতা না থাকায় কমেছে চাহিদা৷ এতে দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফলের দাম কমেছে। পাইকারি বাজারে সব ধরনের ফলে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা দাম কমলেও খুচরা বাজারে এসব ফল আগের দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে।  

শনিবার (৩ জুলাই) দেশের সবচেয়ে বড় ফলের আড়ৎ পুরান ঢাকার বাদামতলীর পাইকারি বাজার ও বিভিন্ন ফলের খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাস ইস্যুতে গত একবছর ধরেই সব ধরনের ফলের দাম বেশি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের চলমান লকডাউনের কারণে পাইকাররা আড়তে আসতে না পাড়ায় সব ধরনের ফলের দাম কমেছে। তিন দিনের ব্যবধানে ফল ভেদে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজিতে দাম কমেছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। তবে আড়তে বিদেশি ফলের তুলনায় দেশি ফলই বেশি দেখা গেছে। দেশি ফলের মৌসুম হওয়ায় বিদেশি ফলের চাহিদাও কমেছে। একারণে আমদানিও কম হচ্ছে বলে জানান আড়ৎদাররা।

আমদানিকারকরা জানান, লকডাউনের কারণে পাইকার না থাকায় ভারত, চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি কমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন বিদেশি ফলের ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক বাদামতলীতে ঢুকতো। বর্তমানে সেখানে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক আসছে। এখন দেশি ফলের মৌসুম হওয়ায় দেশি ফল বেশি আসছে আড়তে। আমাদের কোল্ডস্টোর গুলোতেও তেমন কোনো মজুদ নেই। বর্তমানে ব্যবসায়ী বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। এজন্য সবাই অল্প করে আমদানি করছে।

আড়ৎদাররা জানান, বর্তমানে আড়তে দেশি ফল বেশি। সেগুলো বিক্রির জন্য ক্রেতা নেই। আমদানি করা ফলের মধ্যে আপেল, মালটা, নাসপাতি, নাগফল, কমলা, আঙুর, মনেক্কা, আনার, ড্রগন এসব ফল আসে। তবে তুলনামূলক অন্যান্য সময়ের থেকে এখন কম আসে। আগে মালটা যেখানে ১০ থেকে ১২ ট্রাক আসতো সেখানে আজ মাত্র এসেছে একটি ট্রাক। এরকম করে আমদানি করা সব ফলেই কম আসছে আড়তে। তবে দেশি ফলের মধ্যে আম, কাঁঠল প্রচুর আসছে কিন্তু ক্রেতা নেই। তাই দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফলের দাম কমেছে।

ফলের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে কমলার ১২ কেজির কার্টুন প্রকার ভেদে ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। ২০ কেজির এক কার্টুন গ্রিন আপেল ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা। লাল আপেল ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। যা আগে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা দরে বিক্রি হতো। ১৫ কেজির এক কার্টুন মালটা আগে বিক্রি করেছি ১৬০০ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়। নাগ ফল ১৪ কেজির এক কার্টুন বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকায়। যা আগেছিল ২৪০০ টাকা। আনার/ডালিম ১৯ কেজির এক কার্টুনের দাম ২৮০০ টাকা। যা আগে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হতো।  নাশপাতি নয় কেজির কার্টুন বিক্রি হতো ১৪০০ টাকায়, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকায়। ১০ কেজির এক পেটি আঙুর বিক্রি করছি ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। যা আগেছিল ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা পেটি।

দেশি ফলের মধ্যে প্রতি কেজি আম্রপালি, হিমসাগর ও হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করছি মানভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা দরে। যা লকডাউনের আগে বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৬০ টাকায়। ফজলির দাম একটু কম প্রতিকেজি মানভেদে ১২ থেকে ১৮ টাকা। যা তিন দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে।  
কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে বড় একটা (১৫ থেকে ২০ কেজি) ২০০/২৫০ টাকা। মাঝারি ১০ থেকে ১৫ কেজির প্রতিটি কাঁঠাল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ও ছোট কাঁঠাল ৩০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে মেসাস তালুকদার ফ্রুটসের ম্যানেজার মো. আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আগে আমরা সব ফলই আড়তে উঠাতাম। কিন্তু বর্তমানে বিদেশি ফল কম আসে। আর দেশি ফলের মৌসুম চলছে তাই আড়তে দেশি ফল বেশি। গত বৃহস্পতিবার থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ দেওয়ার পর থেকে আড়তে পাইকার কমে গেছে। পাইকার না থাকায় চাহিদাও কম তাই লোকজন দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

পাইকারি আঙুর বিক্রেতা মো. শামীম বাংলানিউজকে বলেন, ‘লকডাউনে’র কারণে আমদানি কম পাইকারও কম তাই দামও কমেছে।  
রতন ফ্রুটসের মালিক মো. আজমল বাংলানিউজকে জানান, দেশি ফলে কারণে চাহিদা কমেছে বিদেশি ফলের। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লকডাউন। এখন এমন একটা অবস্থা আমরা ঘর ও স্টাফ ভাড়া উঠানে হিমসিম খাচ্ছি।  

খাজা আজমেরি এন্টারপ্রাইজের মো. শরিফ খান বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে এক বছর ধরে সব ফলের দাম বেশি। কিন্তু নতুন করে সাত দিনের ‘লকডাউন’ দেওয়ার ফলে ক্রেতারা আড়তে আসছে না। কাঁচামাল বেশি দিন রাখা যায় না। লোকসান হলেও যে দাম পাচ্ছি ছেড়ে দিচ্ছি।  

এদিকে খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ফল। বাজারে প্রতিকেজি আপেল প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, মালটা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, নাগফল ২০০ থেকে ২২০ টাকা, নাসপাতি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, কমলা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, আঙুর ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, মনেক্কা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আনার/ ডালিম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, আম ৫০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।  

সূত্রাপুর বাজারে ফল বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভাই পাইকারিতে দাম কমলেও আমরা দাম কমাতে পারি না। কারণ আমাদের মালামাল আনার ভাড়া বেড়ে গেছে। অনেক ফল কার্টুনে পঁচা পড়ে, ওজনে কম থাকে সব মিলিয়ে আমরা বেশি লাভ করছি না।  এছাড়া এখন কাস্টমার কমে গেছে। যে ফল আনছি তা কতো দিনে বিক্রি করবো জানি না। এরপর দোকান ভাড়া কর্মচারী সব কিছু দিয়ে আমাদের লাভ করতে কষ্ট হয়।  

রায় সাহেব বাজারের ফল বিক্রেতা আলামিন জানান, পাইকারি বাজারে দাম কমেছে আজকে। কিন্তু আমাদের মালমাল আনা হয়েছে আরো তিন দিন আগে। অথ্যাৎ ‘লকডাউন’ শুরুর আগে। তখন দাম বেশি ছিল।  তাই আমাদের কেনাও বেশি। এজন্য বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি। যখন কম দামে কিনবো আবার কম দামেই বিক্রি করবো। দাম কম বেশি দিয়ে কি লাভ যদি ক্রেতা না থাকে। বর্তমানেতো কোনো ক্রেতাই নেই। কেউ কারো বাড়িতে বেড়াতে যায় না। ফলে বিক্রিও কমে গেছে। পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লাভ করতে অনেক কষ্ট হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে বছরে সোয়া এক কোটি টন ফল উৎপাদন হয়। দেশে প্রায় ১৩০ রকমের ফলের সন্ধান রয়েছে। তার মধ্যে প্রচলিত ও অপ্রচলিত প্রায় ৭২টি ফলের চাষাবাদ হয়। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৩ ২০২১
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।